পর্যটকদের বহন করা জলযান ‘দি সেইল’ সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন বড় কটকা খাল দিয়ে যাচ্ছিল।
Published : 19 Feb 2025, 12:12 AM
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্যও সুপরিচিত। তবে গহীন বনে চলাচল করা ভয়ংকর সুন্দর এই প্রাণীর সাক্ষাৎ পাওয়ার সুযোগ কদাচিৎই মেলে পর্যটকদের।
কিন্তু মঙ্গলবার সুন্দরবনে ঘুরতে গিয়ে সেই দুর্লভ সুযোগ পেয়েছেন একদল পর্যটক। সুন্দরবনে সামনে থেকে রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখতে পাওয়ার বিরল ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন তারা।
এই পর্যটকদের বহন করা জলযান ‘দি সেইল’ বেলা সোয়া ১০টার দিকে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন বড় কটকা খাল দিয়ে যাচ্ছিল।
ঠিক তখনি পাশ দিয়ে পূর্ণবয়স্ক বাঘটি সাঁতরে ওই খাল পার হচ্ছিল। খাল পার হয়ে বাঘটি বনের গহীনে চলে যায়।
এমন মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে উচ্ছ্বাস আর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে জাহাজের সব পর্যটক ও কর্মীদের মধ্যে। তখন যে যার মত করে ছবি তোলেন এবং ভিডিও ধারণ করেন ওই মুহূর্তের।
ওই জলযানে সুন্দরবন ভ্রমণে যাওয়া মোংলা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক ও পশুর রিভার ওয়াটার কিপার মো. নূর আলম শেখ সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের ট্যুরিস্ট জাহাজ কটকা থেকে তখন কচিখালির দিকে যাচ্ছিল। সময় তখন সকাল ১০টা ১০ মিনিট। বড় কটকা খালের মুখে যখন আমরা, তখন বেশ বড়সড় ওই বাঘটি আমরা খাল পার হতে দেখতে পাই।”
সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার বাসিন্দা নূর আলম শেখ আরও বলেন, “গত ২৫ বছর ধরে আমি সুন্দরবনে আসি। প্রতি বছরই একাধিক বার আসা হয়। তবে এবারই প্রথম বনের মাঝে সামনাসামনি এমন বাঘ দেখতে পেয়ে আমি দারুণ উৎফুল্ল।
“আমার এমন সৌভাগ্য হবে তা আমি কোনো দিন কল্পনাও করতে পারিনি। সেই মুহূর্তের অনুভূতি বলে শেষ করা যাবে না।
জাহাজে থাকা ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল মুঠোফোনে ধারণ করা সেই মুহূর্তের একটি ভিডিও নিজের সামাজিক মাধ্যমের ওয়ালে শেয়ার করে লিখেন, “বিশাল আকারের রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখার বিরল অভিজ্ঞতা। ... সুন্দরবন বাঁচাও, বাংলার বাঘ বাঁচাও।”
চিত্র সাংবাদিক আরিফুর রহমান বলেন, “বহুবার সুন্দরবন ঘুরতে এসেছি। বাঘের দেখা পাব এটা প্রতিবারের চাওয়া থাকে। সেই চাওয়া আজ পূর্ণ হলো। এবারের সুন্দরবন ভ্রমণ পরিপূর্ণ হল। ”
পটুয়াখালী থেকে সুন্দরবন ভ্রমণে আসা কামাল হাসান রনি বলেন, “রোববার রাতে মোংলা থেকে সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে আমরা রওনা করি। এবারে সুন্দরবন ভ্রমণটা সারাজীবনের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
এক মাস আগে গত ১৯ জানুয়ারি সুন্দরবনের কটকা অভয়ারণ্যের বেতমোড় এলাকার নদীর পাশে একই জায়গায় তিনটি বাঘের দেখা পান পর্যটকবাহী জলযান এমভি আলাস্কা’র পর্যটকরা।
সে সময় একটি বাঘকে অপর দুটি বাঘ আক্রমণ করে প্রথমে নদীতে ফেলে দেয়। সে বিরল ঘটনার মুহূর্তের বেশ কিছু ছবি, ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
সুন্দরবনের খুলনা বিভাগীয় বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো বলেন, “কোভিড মহামারীর সময়ে সুন্দরবনে সবার প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়। ওই বছর সুন্দরবন ছিল নিরব, কোলাহলমুক্ত। সে সুযোগে বনের প্রাণীদের অবাধ বিচরণ বেড়ে যায়। বন্যপ্রাণীকে তার মত করে চলতে দিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের বিগত তিনটি বাঘ গণনার ফলাফল বিশ্লেষণেও মিলেছে একই ধরনের তথ্য। প্রতি জরিপে ৮ থেকে ১১টি বাঘ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি জানান, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসের সর্বশেষ জরিপ অনুসারে সুন্দরবনে বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা ১২৫টি।
আগামীতে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে এমন প্রত্যাশার কথাও জানান বন বিভাগের এই কর্মকর্তা।