৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র গণ-আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বরগুনার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
Published : 30 Aug 2024, 12:38 PM
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ডাকা সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের মধ্যে বরগুনার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে হামলার পর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। যেখানে জেলার বিভিন্ন ঐতিহ্যের স্মারক ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ করা হয়েছিল।
ঘটনার তিন দিন পর ৮ অগাস্ট ভয়াবহ এ দৃশ্য দেখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি দল জাদুঘরটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছেন। জাদুঘর থেকে লুট হওয়া সামগ্রী ফেরত দেওয়া আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র গণ-আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। সে সময় বরগুনা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ভাঙচুর ও লুট হওয়া নিয়ে মর্মাহত ও ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও সচেতন সমাজ।
বরগুনা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সাংবাদিক চিত্তরঞ্জন শীল জানান, ১৯৮৫ কিংবা ৮৬ সালের দিকে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী জেলার মুক্তিযুদ্ধ ও প্রত্নতাত্ত্বিক কিছু ছবি সংগ্রহ করে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেন।
পরে সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, স্থানীয় প্রশাসন, এলাকার রোভার স্কাউট ও রেডক্রিসেন্ট সদস্যরা এমন উদ্যোগে সহায়তা করেন। সংগ্রহ করা হয় নানা উপকরণ।
পরবর্তী সময় জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময় সরকারে এলে বরগুনার এই কর্মসূচিতে সহযোগিতা করেন। একটা সময় এ উদ্যোগ বিভিন্ন জাতীয় দিবসের কর্মসূচির অংশ হয়ে যায়।
২০১৮ সালে তৎকালীন বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. মোখলেসুর রহমান জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমির একটি পরিত্যক্ত কক্ষে মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র প্রদর্শনীর স্থায়ী ব্যবস্থা করেন।
পরবর্তীতে ২০১৯ সালে তৎকালীন বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ এটিকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।
জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধ ছাড়াও স্থানীয় নানা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ছবি, উপকরণ, বিভিন্ন পুস্তক, প্রাচীন ও বর্তমান প্রদর্শন যোগ্য ডকুমেন্টস সংরক্ষণ করা হয়; যা চলমান ছিল বলে জানান সাংবাদিক চিত্তরঞ্জন শীল।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে মুসলিম লীগ, ন্যাপ, আওয়ামী লীগ, কমিউনিস্ট পার্টি, জামায়াত, কৃষক-প্রজা পার্টি, নেজামে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আন্দোলন সংগ্রামের দলিল সংরক্ষণ করা হয়েছিল। এ ছাড়া সেখানে ইতিহাসভিত্তিক দুষ্প্রাপ্য আলোকচিত্রও ছিল।
জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবির পাশাপাশি ছিল সেক্টর কমান্ডার ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবিও।
জাদুঘরে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে বেতাগী শাহী মসজিদ ও মজিদবাড়িয়ার ঐতিহাসিক মসজিদের ইট, ছবি, বেতাগী কাউনীয়ার পার্বতী রঞ্জন মুখপাধ্যায়ের নির্মিত ঐতিহাসিক মন্দিরের স্মৃতি চিহ্ন, পুরানো রেডিও এবং টেলিভিশন সংরক্ষিত ছিল।
এ ছাড়া ১৯৯০ সালে তালতলী উপজেলার জয়ালভাঙ্গায় ৪৮ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি তিমি মাছের হাড়, বিভিন্ন দেশের হাজার খানেক ধাতব ও কাগজের মুদ্রা সংরক্ষিত ছিল বলে জানান চিত্তরঞ্জন শীল।
হামলার ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, ঘটনার দিন হামলাকারীরা কক্ষের প্রতিটি কাচ ঘেরা টেবিল ও সংরক্ষণ করা উপকরণ লাঠি দিয়ে ভেঙে ফেলেন। অনেক উপকরণ লুট হয়ে গেছে। বেশ কিছু বই খাতাপত্র বাহিরে স্তূপ করে রাখার পর টুকরো টুকরো করে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
এমনকি জাদুঘরে ব্যবহৃত মাইকটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর অবশিষ্ট জিনিসপত্র যে যেভাবে পারে নিয়ে গেছেন।
ঘটনার তিন দিন পর ঘটনাস্থলে যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি দল। জাদুঘরের ভয়াবহ দৃশ্য দেখে তারা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত লুটের মালামাল আর ফেরত আসেনি বলে জানা গেছে।