হাসপাতালের চেয়ারম্যানের বক্তব্য নিতে গেলে তিনি উত্তেজিত হয়ে সাংবাদিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ এসেছে।
Published : 09 Nov 2024, 10:57 PM
কুমিল্লা নগরীর ঝাউতলা এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন স্থানীয় পত্রিকার এক সাংবাদিক।
বৃহস্পতিবার রাতে ঝাউতলার এইচ আর হাসপাতালে ওই প্রসূতির অস্ত্রোপচার হলে শুক্রবার বিকালে তিনি মারা যান।
নিহত ইসরাত জাহান এরিন (২০) কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার আমড়াতলি ইউনিয়নের শিবপুর এলাকার মোবারক হোসেনের মেয়ে।
গত বছর উপজেলার ভুবনঘর এলাকার ব্যাংক কর্মকর্তা দিদার হোসেনের সঙ্গে এরিনের বিয়ে হয়। এটি এরিনের প্রথম সন্তান জন্মদান। প্রসূতি মারা গেলেও নবজাতকটি সুস্থ আছে।
এরিনের বাবা মোবারক হোসেনের অভিযোগ, “এইচ আর হাসপাতালে বৃহস্পতিবার রাতে ডা. নিঝুম আমার মেয়ের সিজার অপারেশন করেন। শুক্রবার দুপুরে অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক এরিনের নাড়ি খুঁজে না পেয়ে তাকে আইসিউতে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
“পরে নগরীর মুন হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসক জানান, এরিনের পেটে রক্তক্ষরণ হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে মেয়ে।”
মোবারক হোসেন আরও বলেন, “পাঁচ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হলেও মেয়েটিকে বাঁচাতে পারিনি।”
বাবার অভিযোগ, “তারা আমাদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সময় পার করেছে। তাদের ভুল চিকিৎসায় আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার বিচার চাই।”
এ ঘটনা আইনের আশ্রয় নেবেন বলে এরিনের চাচা মো. আলম বলেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে শনিবার ওই হাসপাতালের চিকিৎসক মারজান সুলতানা নিঝুমকে একাধিকবার কল করা হলেও তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মহিনুল ইসলাম বলেন, “ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পুলিশ পাঠিয়েছি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কুমিল্লার সিভিল সার্জন নাছিমা আকতার বলেন, “আমরা তদন্ত টিম পাঠিয়েছি। আমাদের ব্যর্থতা হচ্ছে, এসব ক্ষেত্রে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাই না। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া আমরা নিজেরাও ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি।”
সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে সাংবাদিক লাঞ্ছিত
এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহে গেলে হেনস্থা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ করেন জাহিদ হাসান নাইম নামে স্থানীয় একজন সাংবাদিক।
তার দাবি, “হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সেলিম রেজা তাকে লাঞ্ছিত করেছেন। শনিবার দুপুরে হাসপাতালের অভ্যর্থনা কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।”
তিনি বলেন, “প্রসূতির মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে সেলিম রেজা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি আমাকে বলতে থাকেন, ‘সাংবাদিকদের মত আমি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি না, আমার অনেক কাজ আছে। কিছু বলতে পারবো না।’
“হাসপাতালের ছবি তুললাম কেন, এ কথা বলে এক পর্যায়ে তিনি আমার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। একপ্রকার জোর করেই ফোনটি ওনার কাছ থেকে উদ্ধার করি।”
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সেলিম রেজা বলেন, “অভিযোগগুলো মিথ্যা। আমাদের হাসপাতালের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তাও মিথ্যা-বানোয়াট। আপনারা আমার অফিসে আসেন। সামনাসামনি কথা বলে সমাধান করি।”