“মানুষ বলতাছে, আমাদের খাবার দরকার নাই, আমাদের পানি দেন।”
Published : 24 Aug 2024, 05:35 PM
ঢাকা থেকে ত্রাণ নিয়ে গেলেও নৌকা না থাকায় কুমিল্লার বুড়িচংয়ের দুর্গত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
শনিবার দুপুরে ঢাকার কাপ্তান বাজার থেকে আসা এক স্বেচ্ছাসেবক এ তথ্য জানিয়ে বলেন, এখন দুর্গত এলাকায় মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিশুদ্ধ খাবার পানি।
এই দলটি শনিবার সকালেই বুড়িচংয়ের বাঁকশিমুল ইউনিয়নে মানিকপুর গ্রামের কাছাকাছি পৌঁছায়। এই গ্রামের পাশের রেললাইনের পাশে অনেকই ত্রাণ নিয়ে এসেছেন। তারা সেখানেই নৌকার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
স্বেচ্ছাসেবকরা চাচ্ছিলেন, একটু ভেতরে গিয়ে বন্যায় পানিবন্ধি মানুষদের কাছে খাবার ও পানি পৌঁছে দিতে। কিন্তু নৌকার না থাকার কারণে তারা তা পারছিলেন না। ঢাকা বা আশপাশে থেকে যারা নৌকা নিয়ে আসতে পেরেছেন তারা হয়তো নিজেদের মত করে দুর্গত এলাকায় গিয়ে ত্রাণ দিতে পারছেন।
এই অবস্থায় অনেককে কলাগাছ এবং টিউব দিয়ে ভেলা বানিয়ে ত্রাণ পৌঁছানোর চেষ্টা করতেও দেখা গেছে। তবে এটি বেশ বিপজ্জনক বলেও জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। তারা তাদের অভিজ্ঞতা থেকে বলছিলেন, যারাই ত্রাণ নিয়ে আসবেন তারা যেন অবশ্যই নৌকার ব্যবস্থা করে তবেই রওনা দেন। কারণ, নৌকা, ট্রলার বা স্পিডবোট না থাকলে দুর্গত এলাকায় বানভাসি মানুষের কাছে পৌঁছানো যাবে না।
ঢাকার কাপ্তান বাজার থেকে আসা ওই স্বেচ্ছাসেবক (৪০) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলছিলেন, “একটা স্কুলে প্রায় ২০০ মানুষ আছেন। আমরা কাপ্তান বাজার থেকে ১৭০ প্যাকেট খাবার নিয়ে আসছি। কিন্তু নৌকার জন্য এত ভিতরে আমরা যেতে পারছি না। দুইটা নৌকা পাইছি। তাদের বললাম নৌকা দেন, আমরা মানুষকে খাবার দিয়ে আসি। কিন্তু তারা নৌকা দিচ্ছেন না। কারণ, নৌকা নিয়ে তারা গবাদিপশুর খাবার সংগ্রহ করতে বের হয়েছেন। তারা বলছেন, আমাদের গরুকে খাওয়াতে হবে।
মানুষের এখন খাবার পানির সবচেয়ে বেশি সংকট জানিয়ে ওই স্বেচ্চাসেবক বলেন, “মানুষ বলতাছে, আমাদের খাবার দরকার নাই, আমাদের পানি দেন। আমাদের কাছে দেড়শ পাঁচ লিটারের পানির বোতল আছে। কিন্তু নৌকা না থাকার কারণে নিতে পারতাছি না।
“একটা ছোট নৌকা আমরা কাপ্তান বাজার থেকে নিয়ে আসছি। সেটা দিয়ে শুধু খাবার পাঠাতে পারছি। কিন্তু পানি নিতে পারতাছি না।”
এ সময় এক নারীকে দেখা যায় সন্তান কোলে পানি ভেঙে আসতে। তিনি জানান, তার বাড়িঘরে পানি উঠে পড়েছে। সে কারণে তিনি কুমিল্লায় আত্মীয়ের বাড়ি চলে যাচ্ছেন।
স্থানীয়রা বলছিলেন, গোমতী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে এই এলাকা প্লাবিত হয়েছে। রেলাইনের পশ্চিম দিকে ভুড়ভুড়িয়া গ্রামে অনেক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। কিন্তু সেখানে ত্রাণ নিয়ে পৌঁছানো যাচ্ছে না।
মানিকনগরের রেললাইনের আশপাশের প্রায় সব সড়কই পানিতে তলিয়ে আছেন। লোকজনকে গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটতে দেখা গেছে। তার মধ্যে কিছু মানুষ বন্যার পানিতে মাছ ধরছেন।
কয়েকজন স্বেচ্চাসেবক শনিবার কুমিল্লা থেকে বুড়িচং এসেছেন ত্রাণ নিয়ে। তারা বুড়িচং বাজারে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। শুক্রবার ইছাপুরে ত্রাণ বিতরণ করেন। ইছাপুরে প্রচুর ত্রাণ গিয়েছে। কিন্তু বুড়িচংয়ের এই এলাকায় বেশি ত্রাণ না আসায় তারা এখানে ত্রাণ নিয়ে এসেছেন।
দলের একজন স্বেচ্ছাসেবক বলছিলেন, “এখানে একটা ব্যাপার হচ্ছে প্রচুর খাবার আসছে। কিন্তু খাবার মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য কোনো নৌকা নেই।”