সোমবার দুপুর থেকে বাস চলাচল বন্ধ করেছে মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন।
Published : 04 Mar 2025, 05:31 PM
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে দ্বিতীয় দিনের মত জামালপুর থেকে বিভিন্ন সড়কে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রীরা।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রদের অযৌক্তিক দাবি এবং শ্রমিকদের মারধরের অভিযোগ এনে সোমবার দুপুর থেকে বাস চলাচল বন্ধ করেছে মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন।
মঙ্গলবারও বাস চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
মঙ্গলবার সকালে শহরের কম্পপুর থেকে দুই শিশু সন্তান ও বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে ঢাকায় যাবেন বলে জামালপুর শহরে টাঙ্গাইল বাস টার্মিনালে যান রোজিনা আক্তার।
বাস ধর্মঘটের খবর তার জানা ছিল না। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরও কোনো বাস না পেয়ে পুনরায় বাড়িতে ফিরে যান এই নারী।
পাবনা ইপিজেড-এ চাকুরি করা পলাশ ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছিলেন। ছুটি শেষে পাবনার উদ্দেশ্যে যেতে জামালপুর বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখেন পরিবহন ধর্মঘট চলছে।
তিনি বলেন, “এখন বেশি টাকা খরচ করে হলেও কোনো না কোনো উপায়ে পাবনা পৌঁছাতে হবে, তা না হলে চাকরির সমস্যা হবে।”
সদরের শরিফপুর থেকে ঢাকায় যেতে বাস টার্মিনালে এসেছিলেন রাশেদা বানু। ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। বুধবার সকালে কাজে যোগ না দিলে তারও সমস্যা হবে।
জামালপুরে বাস ধর্মঘট জেনে বাধ্য হয়ে অটোরিকশায় শেরপুরের উদ্দেশ্য রওনা দেন এ নারী।
এর আগে রোববার জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ছোট জয়রামপুরে রাজিব সার্ভিসের একটি বাসের চাপায় ব্যাটারিচালিত রিকশার এক যাত্রী নিহত হন। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটি পুড়িয়ে দেয়।
পরে সোমবার জামালপুর-ঢাকা সড়কে চলা বাস সার্ভিস সংস্কার এবং দুর্ঘটনা রোধে রাজিব সার্ভিসের বাস বন্ধসহ ৬ দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখা।
মানববন্ধনের সময় বাস শ্রমিকদের সঙ্গে ছাত্রজনতার ধাক্কাধাক্কিও হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামালপুরের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আবিদ সৌরভ সাংবাদিকদের জানান, তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাস শ্রমিকরা হামলা করে।
তিনি বলেন, “৫ অগাস্টের পর সারাদেশে বিভিন্ন সেক্টর সংস্কার হলেও জামালপুরের রাজিব পরিবহনসহ বিভিন্ন বাস সার্ভিস পূর্বের মতোই রয়েছে। এখন সময় এসেছে এসব সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার।”
এবিষয়ে জামালপুর জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক ও শ্রমিক ইউনিয়নের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সোবহান বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে কতিপয় দুষ্কৃতকারী জামালপুর বাসস্ট্যান্ডের সামনে রাস্তা অবরোধ করে এবং যানচলাচলের বিঘ্ন ঘটায়।
“তাদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হলে তারা তা প্রত্যাখান করে এবং বাসস্ট্যান্ডের ভিতরে ঢুকে শ্রমিকদের উপর হামলা করে। এ অবস্থায় নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে আমরা কর্মবিরতি পালন করছি। ”
দুষ্কৃতিকারীকে গ্রেপ্তার করা না হলে এই পরিবহন ধর্মঘট চলবে বলেও জানান তিনি।
জামালপুর জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শুভ বলেন, “শ্রমিকের হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার দুপুরে তারা জামালপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। হামলাকারীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।”
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাস চলাচল বন্ধ নিয়ে এর মধ্যেই আমরা বাস মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান হবে।”
তবে জামালপুর জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম জার্নিস মঙ্গলবার বিকালে দাবি করেন- তাদের সঙ্গে এখনো কোনো আলোচনা করা হয়নি।
তিনি বলেন, আমরা স্মারকলিপি দিয়েছি। আমরা আমাদের নিরাপত্তা চেয়েছি, যাতে আমাদের চালক-শ্রমিকদের ওপর কোনো হামলা না হয়। আমরা এজন্য আজ রাত পর্যন্ত সময় দিয়েছি। না হলে আমরা রাজপথেই দাবি আদায় করে নিব।
তিনি আরও বলেন, “বাস সার্ভিস উন্নতকরণের জন্য যে কেউ দাবি করতে পারে। তবে সেটার জন্য সময় দিতে হবে। একদিনে সবকিছু পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। আমরাও চাই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এই জেলার বাস সার্ভিস উন্নত হোক।”
পুরানো খবর