শীত থেকে বাঁচতে গিয়ে আগুনে দগ্ধ হওয়ার ঘটনা বাড়ছে বলে জানান পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক মনোয়ার হোসেন।
Published : 26 Jan 2024, 02:38 PM
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা ৭ থেকে ১০ এর মধ্যে ওঠানামা করলেও শুক্রবার তা নেমেছে ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা চলতি শীত মৌসুমের সারাদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
একইভাবে তাপমাত্রার পারদ নেমেছে কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুরেও। কুড়িগ্রামে শুক্রবার সকালে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা মৌসুমের জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আর দিনাজপুরে রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি।
তাপমাত্রার নিম্নগতির সঙ্গে ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ার বেড়েছে শীতের তীব্রতা। ফলে কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের উত্তরের এই জেলাগুলোর জনজীবন।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, শুক্রবার সকাল ৯টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। এমন তাপমাত্রা থাকতে পারে আগামী আরো দুয়েক দিন।
তিনি বলেন, জেলায় কয়েকদিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চললেও তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামায় তা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে এমন কুয়াশা পড়ছে, যে মনে হয় বৃষ্টি পড়ছে। সকাল পেরিয়ে দুপুরেও ফাঁকা থাকছে রাস্তাঘাট। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
সত্তরোর্ধ্ব হাফিজান বেওয়া বলেন, “এতদিন বয়স হইল, এরম ঠান্ডা আগে বুঝা যায়নি। ”
আলিমদ্দীন বলেন, “ছুয়ালা (শিশুরা) এনং ঠান্ডাত ঘ্রর থেকে বাহিরত (বাইরে) বের হবা চাহে না। উমাহাক বলে ভয় লাগেছে। আসলে উমাহাক ঠান্ডা লাগেছে।”
গৃহবধূ লতিফা বলেন, দুদিন থেকে বাড়ির সবচেয়ে ছোট বাচ্চাটার জ্বর আর সর্দি। এখনও কমছে না। কবে যে যাবে তাই নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
তার মতে শীত না গেলে বাচ্চাদের এমন অসুখ লেগে থাকবেই। তাই শিশুদের সাবধানে রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে শীত থেকে বাঁচতে গিয়ে আগুনে দগ্ধ হওয়ার ঘটনা বাড়ছে বলে জানান পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক মনোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, প্রচণ্ড শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে অনেকেই দগ্ধ হয়েছেন। চলতি জানুয়ারি মাসে অগ্নিদগ্ধ ২৯ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে বৃহস্পতিবার অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন ফেলানি বেওয়া নামের এক নারী মারা গেছেন।
এছাড়া কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও পাঠানো হয়েছে বলে জানান এই চিকিৎসক।
সামর্থ্যবানদের শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, পঞ্চগড়ে শীতার্তদের মধ্যে বিতরণে প্রায় আড়াই হাজার শীতবস্ত্র পাওয়া গেছে। সেগুলো বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল। আরও শীতবস্ত্রের চাহিদা জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রামে বইছে মাঝারি শৈত্য প্রবাহ
এদিকে মাঘের শীতে মাঝারি শৈত্য প্রবাহে জবুথবু হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রাম জনপদের মানুষ।
শুক্রবার সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এ মৌসুমে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, জানুয়ারি মাস জুড়েই তাপমাত্রা এরকম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ২৮ তারিখের পর তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে।
তাপমাত্রা নিম্নগামী হওয়ায় তীব্র শীত কষ্টে পড়েছেন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমরসহ ১৬টি নদ-নদী তীরবর্তী চার শতাধিক চরাঞ্চলের মানুষজন।
কনকনে ঠান্ডা ও শীতের দাপটে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়েছে। ঘন কুয়াশায় ঢেকে গেছে গোটা জনপদ। সঙ্গে হিমেল হাওয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে শীতের তীব্রতা। খড়কুটো জ্বালিয়ে উষ্ণতা নেওয়ার চেষ্টা করছে মানুষজন।
সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের হোসেন আলী বলেন, “২২ দিন থেকে চরম ঠান্ডা। কাজ কামাই করতে পারছি না। আমরা যারা দিন করে দিন খাই, আমারগুলার সমস্যা হইছে।”
ওই এলাকার মোক্তার আলী নামের এক শ্রমিক বলেন, “সকালে যখন বোরো ধানের বীজতলায় কাজ করি, তখন হাত পা বরফ হয়ে যায়। দীর্ঘস্থায়ী ঠান্ডায় অবস্থা খারাপ। কামকাজ নেই, হাতেও টাকা নেই। তাই ধার কর্জ করে চলতে হচ্ছে।”
অন্যদিকে জেলার হাসপাতালগুলোতেও বেড়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশিসহ শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। এছাড়া তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে থাকায় জেলার মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের ২ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
হাড় কাঁপানো শীত যেন স্থায়ী রূপ নিয়েছে দিনাজপুরে
দিনাজপুরে তাপমাত্রার পারদ ক্রমেই নিচের দিকে নামছে। এর আগে সপ্তাহব্যাপী তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করেছে। তবে শুক্রবার তা ৭ দশমিক ২ ডিগ্রিতে নেমেছে।
দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আসাদুজ্জামান জানান- বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও শুক্রবার শুরু হয়েছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ।
শুক্রবার সকাল ৯টায় দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা বুধবার ছিল ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
স্থানীয়রা জানান, এবার একটানা প্রায় ১৬ দিন শীতের দাপট থাকায় কনকনে শীতে পুরো জেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিগত কয়েক বছরে জেলায় একটানা এমন তীব্র শীতের প্রকোপ ছিল না। এবার যেন হাড় কাঁপানো কনকনে শীত স্থায়ী রূপ নিয়েছে।
তবে গত ৩-৪ দিন দিনের মধ্যভাগে কিছুক্ষণ সূর্যের দেখা মেলায় কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও বিকাল থেকে সকাল পর্যন্ত শীত আর কুয়াশার দাপট ঠিকই থাকছে।
শ্রমজীবী মানুষের যেমন দুর্ভোগ বেড়েছে তেমনি শিশুসহ সব বয়সের মানুষ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এদিকে প্রচণ্ড শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে আলু এবং বোরো বীজতলা ।