এভাবে এক ঘণ্টার বেশি সময় খোঁজাখুঁজি আর অপেক্ষা করেও নিজের বুথ খুঁজে না পেয়ে হয়রান হোসনে আরা। একা একা এসেছেন, সঙ্গে কেউ নেই।
সকাল সোয়া ১০টায় বিরক্ত হয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই বয়োবৃদ্ধ নারী বলেন, “ভোট খুঁজতাম গিয়া প্রেশার বাইড়া গেছে। বাড়িত যাই। পারলে দুপুরের পর আবার আমু।”
প্রায় একই অবস্থায় পড়েছেন ষাটোর্ধ্ব নার্গিস সুলতানাও। তিনি সকাল ১০টায় মেয়ে যারিন সুবাহ রিসতাকে নিয়ে আসেন নগরীর ওয়াডব্লিউসিএ স্কুল ভোটকেন্দ্রে। তিনি নাম খুঁজতে গিয়ে দেখেন সেখানে তার ভোট নেই।
তখন বাজে সোয়া ১০টা। জানালেন, পাশের কেন্দ্র নবাব ফয়েজুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে যাবেন। সেখানে মেয়ের ভোট আছে। নিজের ভোটও সেখানে চলে গেছে কি-না খুঁজে দেখবেন।
নগরীর আবদুল মজিদ দেওয়ান কলেজের অধ্যক্ষ সেতারা ইয়াসমিন কাজল সম্পর্কে নার্গিস সুলতানার ভাগ্নি। তিনিও ভোট দিতে এসেছিলেন এবং তার খুব একটা সময় হয়নি ভোট দিতে। পরে তিনিও তাদের সহযোগিতা করার জন্য ফয়েজুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে আসেন।
এই কেন্দ্রে নার্গিস সুলতানা সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টার দিকে নিজের ভোটার আইডির খোঁজ করেন। না পেয়ে শেষে ক্ষ্যান্ত দেন। কিন্তু ভোট দিতে পেরেছেন মেয়ে যারিন সুবাহ রিসতা।
ভোট দিয়ে প্রতিক্রিয়ায় রিসতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রথমবারের মতো ভোট দিলাম। ভোট দিতে পেরে ভালো লাগছে।”
এই কেন্দ্রেই প্রথমবারের মতো ভোট দিয়েছেন জাফরিন জাহান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য তিনি এবার পরীক্ষা দিচ্ছেন।
জাফরিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার ভোট আমি দিয়েছি। আমি অত রাজনীতি নিয়ে ভাবিনি, যাকে দিলে কুমিল্লাবাসী শান্তিতে থাকবে, তাকেই ভোট দিয়েছি।”
ফয়েজুন্নেছা কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার শেখর গোস্বামী বেলা সাড়ে ১১টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এখন পর্যন্ত আড়াইশর মতো ভোট কাস্ট হয়েছে। কেন্দ্রে ভোটের সংখ্যা দুই হাজার ২৫৪। বৃষ্টি না থাকলে আরও বেশি কাস্টিং হতো হয়তো।
দুপুর ১২টার পর ফয়েজুন্নেছা থেকে বেরিয়ে আসার সময় দেখা হয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফাহিমা বিনতে আখতারের সঙ্গে। তিনি এক সহকর্মীর সঙ্গে ভোটারদের কেন্দ্র খুঁজে না পাওয়া নিয়েই আলাপ করছিলেন।
পরিচয় দিয়ে এ নিয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কেন এমনটা হচ্ছে এখনও ভালো করে বুঝতে পারিনি। আমরা দেখলাম, মেয়র বা কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিতরণ করা স্লিপ নিয়ে যারা আসছেন, তারা সহজেই কেন্দ্র এবং ভোটকক্ষ খুঁজে পেয়ে যাচ্ছেন।”
নগরীর আরও কয়েকটি কেন্দ্র থেকে এ ধরনের বিপত্তির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইভিএম নিয়ে কিছু বিপত্তির কথাও বলেছেন ভোটার ও প্রার্থীরা।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, এদিন সকাল ৮টায় নির্ধারিত সময়েই এ নগরীর ১০৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে।
সোয়া দুই লাখের বেশি ভোটারের এ নগরে ভোট নেওয়া হচ্ছে ইভিএমে। আর এবারই প্রথম সব কেন্দ্র ও ভোট কক্ষে রয়েছে সিসি ক্যামেরা।
সকালে ভোট দিয়ে সাক্কু ও কায়সার দুজনই ইভিএমে ভোট নিয়ে স্লথ গতির অভিযোগ করেছেন।
এ সময় দুইবারের মেয়র সাক্কু বলেন, “অন্য সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু ইভিএম পদ্ধতিতে একটু ক্রটি আছে, মেশিনে কোনো কোনো কেন্দ্রে কাজ করতাছে না।
“আমি তো ভোট দিয়া আইলাম। টিপ দিলে তো (প্রতীক) শো করবে, আপনি কাকে ভোট দিছেন শো করবে, কিন্তু (এখানে) শো করে না। একটা কেন্দ্রে গেছি, (প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে) বলছি। কাপ্তানবাজার গেছি… ছবি উঠে না। যারেই ভোট দেই ছবিডা তো উঠব, (কিন্তু) ছবিই উঠে না।“
“শুধু ইভিএম পদ্ধতিতে একটু ক্রুটি হচ্ছে, এইডাই কথা, অন্য কিছু না।”
আর ইভিএমে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, “সবেমাত্র একটি কেন্দ্রে গিয়েছি। তবে বয়ষ্কদের তো ইভিএম নিয়ে সমস্যা হয় আর ভোটগ্রহণ শ্লো হয়, দেখা যাক...।”