১৭ বছর বসয়ী এই কিশোরের বাবা একজন কৃষক। জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার সৈয়দপাড়ায় তাদের বাড়ি।
কিশোরের বাবা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোভিড মহামারী শুরুর বছর এলাকার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত তার ছেলে।
“স্কুল যখন বন্ধ হয়ে গেল, তখনই ধরল মোবাইলে অনলাইন গেইমের নেশা। পাবজি, ফ্রি ফায়ার, এইসব খেলার নেশা হয়ে গেল। মানা করলে শুনত না। নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে খেলত। অনেক বকাঝকা করেও খেলা ছাড়াতে পারিনি। এখন আর সে নিয়ন্ত্রণে নাই।”
তিনি বলেন, “আসক্তি এতটাই প্রবল হয়ে উঠেছে যে মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হলে ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। সামলাতে না পেরে তাকে বেঁধে রাখা হয়। এ অবস্থায় তাকে স্কুলেও পাঠাতে পারছি না। একেবারে পাগলের মত করে। সুস্থ করার জন্য ডাক্তার দেখিয়েছি। ডাক্তার ওষুধ দিয়েছে। সেটা খাওয়াচ্ছি।”
বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, রবার দিয়ে হাত এবং পা শেকল দিয়ে ঘরের বারান্দায় বেঁধে রাখা হয়েছে কিশোরকে।
সে বললো, বন্ধুদের দেখাদেখি খেলতে শুরু করেছিল, এখন না খেললে ভালো লাগে না।
দুই ভাইবোনের মধ্যে ছেলেটি ছোট। বোনের বিয়ে হয়েছে।
বোন বললেন, মহামারীর সময় তিনি শ্বশুড়বাড়িতে ছিলেন। বাবা-মা নিজেদের কাজে ব্যস্ত থাকতেন। স্কুলও বন্ধ ছিল। তখন বসে বসে গেইম খেলা শুরু করে তার ভাই।
“খেলার নেশায় সে পাগলের মত হয়ে গেছে। চিকিৎসা করানো হচ্ছে। তার পরও আমরা দুশ্চিন্তায় আছি।"
বুধবার ছেলেকে নিয়ে যশোর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক আমিনুল ইসলামের কাছে যান পরিবারের সদস্যরা।
আমিনুল বলেন, “সময়মত খাওয়া-দাওয়া না করা আর অতিরিক্ত রাত জাগায় এ রকম হয়েছে। ওকে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফেরাতে হবে।”
এ ধরনের রোগীকে সুস্থ করতে সঙ্গ দেওয়া প্রয়োজন বলে জানালেন একই হাসপাতালের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ আমিনুর রহমান।
তিনি বলেন, “এ জাতীয় রোগীর কাউন্সেলিং বেশি প্রয়োজন। মোবাইল ফোন বাদ দিয়ে তাকে সঙ্গ দিয়ে সুস্থ করে তুলতে হবে।”
গ্রামের অনেক কিশোর-তরুণ মোবাইল ফোনে গেইমে আসক্ত হয়ে পড়ছে জানিয়ে অভিভাবকদের সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন কিশোরের বাবা।
তিনি বলেন, “আদরের সন্তানের হাতে মোবাইল ফোন দিয়েন না। খোঁজ নিয়ে দেখেন সে কী করে। দেরি হয়ে গেলে আমার ছেলের মত হবে।”