বিদ্যালয়ে তদন্ত কমিটির সামনে হৃদয় মণ্ডল

ক্লাসের আলোচনায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগের মধ্যে কারাভোগ করার পর ওই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সামনে হাজির হয়েছেন মুন্সীগঞ্জের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 April 2022, 02:23 PM
Updated : 13 April 2022, 02:50 PM

বুধবার সকালে তিনি ঢাকা থেকে নিজ কর্মস্থল মুন্সীগঞ্জের পঞ্চসার ইউনিয়নে বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে আসেন।

এরপর তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দিয়ে বিদ্যালয়ে অবস্থান করেন। বিকালে তিনি আবার ঢাকায় ফিরে যান। তবে তার স্ত্রী ও সন্তান বিদ্যালয় কোয়ার্টারেই আছেন।

তিন সপ্তাহ পর তিনি বিদ্যালয়ে এলেও ক্লাস নেননি।

চলতি বছরের ২০ মার্চ হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল বিজ্ঞান ক্লাস নেওয়ার সময় তার কথা অডিও রেকর্ড করে কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরে রেকর্ডটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

২২ মার্চ একদল শিক্ষার্থী ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ করে; তাদের সঙ্গে কিছু বহিরাগতও যুক্ত হয়। পরে পুলিশ গিয়ে হৃদয় মণ্ডলকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

ওই রাতেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও ধর্মী বিশ্বাসকে অপমানিত করার অভিযোগে দণ্ডবিধির ২৯৫/২৯৫ক ধারায় মুন্সীগঞ্জ থানায় বিদ্যালয়টির অফিস সহকারী (ইলেক্ট্রিশিয়ান) মো. আসাদ মামলা করেন এবং হৃদয় মন্ডলকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

এরপরই বিষয়টি নিয়ে সারা দেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়।

এই ঘটনা তদন্তে শিক্ষা অধিদপ্তর এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সরকারি হরগঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুল হাই তালুকদার এই কমিটির একমাত্র সদস্য।

আব্দুল হাই বুধবার বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ৫ ঘণ্টা বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে অবস্থান করেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি ওইদিন ওই ক্লাসে থাকা শিক্ষার্থী, মোবাইলে অডিও রেকর্ড করা এবং অভিযোগ দেওয়া ছাত্র, মামলার বাদী, প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং বিদ্যালয়ের গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলসহ ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। এছাড়া সঠিক তথ্য উদঘাটনে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন।

প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা ধরে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বেলা সাড়ে ৪টায় বিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি।

অধ্যাপক আব্দুল হাই তালুকদার বলেন, শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে নিয়ে এ পর্যন্ত যে ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলো মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের গোচরীভূত হয়েছে। এরপর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এখানে কী হয়েছে সে বিষয়টি উদঘাটন করে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য তাকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগদান করেছে।

তিনি ১১ তারিখে এ সংক্রন্ত চিঠি পাওয়ার পর থেকেই কাজ শুরু করেন বলে জানান।

তিনি বলেন, “আজ এখানে আমি সরেজমিনে তদন্ত করার জন্য এসেছি। এই তদন্তের মূল বিষয় হচ্ছে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল ধর্ম অবমাননার কথা বলেছেন কি বলেননি। সেটাই হবে আমার রিপোর্টের মূল ফোকাস। সেজন্য যার যার এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা আছে তাদের সবার আমি স্ট্যাটমেন্ট নেব, প্রশ্ন করব এবং এর মধ্য দিয়ে আসল ঘটনাটি বের হয়ে আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”

তিনি আরও বলেন, “তদন্তের প্রয়োজনে আশপাশের কারও যদি সংশ্লিষ্টতা আছে মনে হয় তাদের সঙ্গেও আমি কথা বলব। ঘটনার সত্যতা যাচাই করার জন্য আমি তাদেরও সাক্ষ্য নেব।”

সকল তথ্য বিচার করে নিরপেক্ষ সত্য উদঘাটন করে প্রতিবেদন প্রেরণ করবেন বলে জানান তিনি।

আব্দুল হাই বলেন, পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে আমাকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আমি চেষ্টা করব সে সময়ের মধ্যেই সঠিক প্রতিবেদন জমা দিতে। তবে তদন্তের সার্থে যদি দু-একদিন বেশি সময় লাগে আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সেটি বাড়িয়ে নেব।”

ওইদিন ক্লাসে করা রেকর্ড বিষয়ে তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের রেকর্ডটাই আসল। প্রকৃত যে রেকর্ডটা সেদিন ছাত্ররা করেছিল শিক্ষক-ছাত্রদের রেকর্ডটি উদ্ঘাটন করার চেষ্টা করব। সে রেকর্ডটিই আসল। সেখানে ছাত্ররা কী বলেছে, শিক্ষক কী বলেছেন সেটি আছে। রেকর্ডটিই আমার তদন্তের মূল প্রতিপাদ্য হবে।”

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “হৃদয় মণ্ডল এখন ক্লাস করতে পারবেন কিনা সেটি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিষয়। আমার কাজ শুধু তদন্তের। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সবার বক্তব্য, ছাত্রদের ধারণকৃত অডিও রেকর্ডসহ অন্যান্য তথ্যাদি সংগ্রহ করে, যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করব।”

এদিকে, ২২ দিন পর কর্মস্থলে ফিরে হৃদয় মণ্ডল বলেন, “আমার প্রতিপক্ষ তো শিক্ষক; ছাত্র নয়। আমি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষক হিসেবে ক্ষমা করে দিচ্ছি। তারপরও আর কোথাও যেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তাই অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।”

তিন সপ্তাহ পর হৃদয় মণ্ডল বিদ্যালয়ে এলেও তিনি ক্লাসে নেননি; কবে থেকে পাঠদান করতে পারবেন তাও নিশ্চিত হয়নি।

এই বিষয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদ বলেন, “তদন্ত কমিটির প্রক্রিয়া শেষেই তিনি পাঠদান শুরু করবেন। কবে থেকে বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদান করবেন এখনও তা নিশ্চিত হয়নি।”

আরও পড়ুন