ভিসির পদত্যাগের দাবিতে তার বাড়ির সামনের সড়কে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন চলছে পাঁচ দিন ধরে। অনশনরতদের পাশপাশি সেখানে অন্য শিক্ষার্থীরাও অবস্থান নিয়ে রয়েছেন।
সেখান থেকে ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী রোববার বিকাল পৌনে ৫টায় উপাচার্যের বাসভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যান।
তবে পুলিশ তাদের কোনো বাধা দেয়নি। বিকাল পৌনে ৫টা থেকে রাত পৌনে ৮টা পর্যন্ত কেউ উপাচার্যের বাড়িতে ঢুকতেও আসেননি। ফলে তিন ঘণ্টায় বাধাদানের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
সাড়ে ৭টার দিকে শিক্ষার্থীরা সেখানে বসে যান।
শিক্ষার্থীদের অবস্থানের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে সেখানে দায়িত্বরত একজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।
তিনি বলেন, “ভিতরে আমাদের স্যার (পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা) আছেন। তার সঙ্গে কথা বলেন। তিনিই এসব ব্যাপারে কথা বলবেন।”
ফটকে অবস্থান নেওয়ার পর আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমের সামনে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করা হয় এবং কয়েকজন কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে শিক্ষার্থী ইয়াছির সরকার বলেন, “আমাদের এ আন্দোলন অহিংস আন্দোলন। আমরা সহিংস কোনো কিছু করতে চাচ্ছি না। আমাদের অনশন কর্মসূচি চলবে যতক্ষণ না এই উপাচার্য পদত্যাগ করছেন।”
আন্দোলনকারী মোহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, “আমরা চার-পাঁচ দিন ধরে ভিসির বাসভবনের সামনে বসে আছি। আমরা দেখছি যে, ক্রমাগত লোকজন ভিসির বাসভবনে ঢুকছেন, বের হচ্ছেন, ভিসি তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। এটা আসলে আমরা মেনে নিতে পারছি না। উপাচার্য এসে একবারও আমাদের সঙ্গে কথা বলেননি। এরপর আমরা তার চেহারা আর দেখতে চাই না।”
“আমরা চাই যে, আমাদের চোখের সামনে দিয়ে এই ভিসির বাসভবনের ভিতরে যাতে আর কোনো মানুষ প্রবেশ না করে। আমরা চাই যে, আমরা যে জায়গায় অবরুদ্ধ হয়ে বসে আছি, তিনিও এরকম অবরুদ্ধ হয়ে বসে থাকুন”, যোগ করেন রাজ।
আন্দোলনকারী নাফিসা আনজুম বলেন, “আমরা তো ভিসির বাসভবনের সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়নি। আমরা চাই না কোনো শিক্ষক বা ব্যক্তিবিশেষ কেউ তার সঙ্গে দেখা করুক। আমাদের শিক্ষার্থীরা মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন, আর উনি (উপাচার্য) উনার বাসভবনে বসে সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন, সব মানুষজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত করবেন- সেটা আমরা মেনে নিতে পারছি না। বাসভবনে শুধু যাওয়া-আসার পথটা বন্ধ করে দেওয়াই আমাদের উদ্দেশ্য।“
‘কঠোর অবস্থানটি’ কী হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "বাসভবনের সব যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিব।”
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী সাদিয়া বলেন, “শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দুপুরের পর আলোচনার কথা ছিলো। কিন্তু মন্ত্রীর পক্ষ থেকে এখনও আমরা কিছু জানতে পারিনি।”
বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা। ১৬ জানুয়ারি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
ওইদিন বিকালে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েনের প্রতিবাদ করলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয় পুলিশ। ধাওয়া-পাল্টার এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাসহ অন্তত অর্ধশত আহত হন।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিলেও তা উপেক্ষা করে উল্টো উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন তারা।
ওই ঘটনায় পুলিশ ‘গুলি বর্ষণ ও হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিটের অভিযোগে’ অজ্ঞাতপরিচয় ২০০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে।