আধিপত্য বিস্তার, ছাত্রলীগের কমিটি ও মাদক ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জেরে নয়নকে ‘পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে’ হত্যা করা হয়েছে বলে নয়নের মা মনোয়ারা বেগম ও বড় ভাই মো. মানিক মানিক মিয়া মনে করেন।
তাদের দাবি, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে খাইরুল ইসলাম মীর নামের এক যুবলীগ নেতাসহ আরও ১০/১৫ জন জড়িত।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে শ্রীপুরের কাওরাইদ বাজারের কাওরাইদ ইউনিয়ন আওয়ামী কার্যালয়ের কাছের এক পুকুর থেকে ২৮ বছর বয়সী নয়নের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নয়ন ওই ইউনিয়নের বেলদিয়া গ্রামের মোহাম্মদ আব্দুল কাদিরের ছেলে এবং কাওরাইদ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন।
নয়নের বড় ভাই মানিক মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি সেদিনের ঘটনার বর্ণনায় বলেন, বৃহস্পতিবার বিকালে উপজেলার কাওরাইদ কেএন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামের জালাল মিয়ার ছেলে কাওরাইদ ইউনিয়নের যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী খাইরুল ইসলাম মীরের ছেলে অনুভবের (১৪) সঙ্গে নয়নের অনুসারীদের ঝগড়া হয়।
পরে তারা ঘটনাটি নয়নকে জানালে সে উভয় পক্ষকে ডেকে আনেন। সেখানে নয়ন অনুভবকে থাপ্পড় মেরে বিষয়টি মিটমাট করে দেয়। ছেলেকে থাপ্পড় মারায় ক্ষুব্ধ হন খাইরুল।
তিনি বলেন, “এর জেরে খাইরুল রাতে নয়নকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ অফিসে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই ইউনিয়ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের সামনে নয়নকে বেধড়ক মারধর করা হয়।
মানিক মিয়ার অভিযোগ, “নয়নের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখা গেছে। ঘটনার পরে খাইরুল মীর ও তার অনুসারীরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের কাছে জানতে পারি যে, মারধরের পর নয়ন দৌঁড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
“এক পর্যায়ে নয়ন পুকুরে পড়ে গেলে তাকে সেখানে মারধর ও পানিতে চুবিয়ে হত্যা করা হয়।”
নিহতের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, “চার মাস আগে খাইরুলের অনুসারী মাদক ব্যবসায়ী বাচ্চুর সঙ্গে নয়নের মারামারি হয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ নানা বিষয়ে নয়নের সঙ্গে খাইরুল ও তার অনুসারীদের বিরোধ চলছিল। তারা বিভিন্ন সময় নয়নকে খুন-জখমের হুমকিও দিত।”
তিনি জানান, ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছিলেন তার ছেলে। অন্যদিকে খাইরুলও ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে তার অনুসারী অন্য একজনকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন। নয়ন তাদের প্রার্থীর তুলনায় বেশ জনপ্রিয় ছিল।
এ বিষয়ে কথা বলতে শুক্রবার খাইরুলের বাড়িতে গেলে তার ঘর তালাবদ্ধ দেখা যায়। তাকেও সেখানে পাওয়া যায়নি।
গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল আলম রবিন বলেন, “নয়ন ছাত্রলীগের ত্যাগী একজন নেতা ছিল। পরিশ্রমী ও নিবেদিত প্রাণ ছিল ছাত্রলীগের জন্য। তার অকাল মৃত্যুতে ছাত্রলীগ গভীরভাবে শোকাহত।”
শ্রীপুর থানার ওসি খোন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, নয়ন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এবিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।