অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ময়মনসিংহের ত্রিশালের সংসদ সদস্য।
Published : 11 Mar 2024, 10:18 PM
ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় এক ছাত্রলীগ নেতাকে তুলে নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যের বাসায় নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রোববার রাতে এ ঘটনার সময় ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় থানার সামনে সংসদ সদস্য এ বি এম আনিছুজ্জামানের সমর্থকদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়।
এ নিয়ে সোমবার দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে ছাত্রলীগের একাংশ। এ সময় সেখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মীও ছিলেন। তারা ছাত্রলীগ নেতাকে নির্যাতনের ঘটনার বিচার দাবি করেন।
তবে ছাত্রলীগের নেতাকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংসদ সদস্য।
ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য হন আনিছুজ্জামান। শনিবার সেখানকার উপনির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়ে হেরে যান সংসদ সদস্যের স্ত্রী শামীমা আক্তার।
হারার পর রাতে তাকে নিয়ে ফেইসবুকে একটি পোস্ট দেন ত্রিশাল সরকারি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী এবং কলেজের মানবিক বিভাগ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমদ। তিনি ত্রিশাল ইউনিয়নের চকপাঁচপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী আবদুর রহিমের ছেলে। ফয়সাল পরে সেই পোস্টটি মুছে ফেলেন।
এর জের ধরে রোববার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে এক বন্ধুর মাধ্যমে ডেকে সংসদ সদস্যের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান ফয়সাল আহমদ।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “এমপির বাসার তিনতলায় নিয়ে রাব্বি, আব্দুল্লাহ, অপরিচিত একজন ও এমপির ছোট ছেলে সাদমান সামিন আমাকে হকিস্টিক, লোহার পাইপ, লাঠি ও চেলাকাঠ দিয়ে মারধর করতে থাকেন। অনেক মারধরের পর কিছু সময়ের জন্য বন্ধ থাকে।
“পরে এমপির বড় ছেলে হাসান তার লোকজন নিয়ে আরেক দফা মারধর করেন। একপর্যায়ে পলিথিনে করে ককটেল সামনে দিয়ে বলে, তারা যা বলবে তাই করতে হবে। নাহলে আঙ্গুল ভেঙে দেবে।
“আমি এমপিকে মারার জন্য ককটেল নিয়ে এসেছি- এই মর্মে আমার স্বীকারোক্তি নেয় এবং মোবাইলে ভিডিও করে। এ সময় আমি এমপির কাছে ক্ষমাও চাই। তিনি আমাকে বিভিন্ন মামলা দিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়ার ভয় দেখান এবং আমার হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দেন।”
ফয়সাল বলেন, “পরে এমপি সাহেব পুলিশ ডেকে থানায় আমাকে দিয়ে দেন।”
এদিকে ফয়সালকে তুলে নিয়ে এমপির বাসায় মারধর ও পুলিশে দেওয়ার খবর পেয়ে রোববার রাত ৯টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। মহাসড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সংসদ সদস্য আনিছের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা।
রাত সোয়া ১০টার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা হাতে প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে থানার গেইটের সামনে যায়। এ সময় সেখানে তাদের সঙ্গে সংসদ সদস্যের অনুসারীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুম মিয়া, রিয়াদ আরেফিন লিয়ান, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস সাত্তার আহত হন। তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এমন পরিস্থিতিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম মো. সামছুদ্দিনের জিম্মায় ছাত্রলীগ নেতা ফয়সালকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিষয়টি নিয়ে সোমবার দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল হাসান সোহান।
এ সময় সেখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আশরাফুল ইসলাম মণ্ডল, সাবেক পৌর কমিশনার ও আহত ছাত্রলীগ নেতা ইমরান হোসেনের বাবা দুলাল মণ্ডল ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাসান মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলা হয়, “স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এমপি হওয়ার পর তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে যারা ভোট দিয়েছেন তাদের এলাকা ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছেন।”
আহত ছাত্রলীগ নেতা ইমরান হোসেনের বাবা সাবেক পৌর কমিশনার দুলাল মণ্ডল সংবাদ সম্মেলনে আহাজরি করে ছেলেকে মারধরের বিচার দাবি করেন।
এ ব্যাপারে ত্রিশাল থানার ওসি মো. কামাল হোসেন বলেন, “এমপির ফোন পেয়ে বাসা থেকে ফয়সালকে আনা হয়। ফেইসবুকে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে ঘটনা ঘটেছে। ফয়সালের শরীরজুড়ে মারধরের আঘাত ছিল।
“তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকায় রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়”, বলেন ওসি।
তবে ত্রিশালের সংসদ সদস্য এ বি এম আনিছুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “ফয়সাল ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত নয়। তাকে কোনো মারধর করা হয়নি এবং আমার ছেলে সেখানে ছিল না। সে গত সংসদ নির্বাচন থেকে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। সে এখন লিখেছে আমার স্ত্রী সম্পর্কে বিভিন্ন অশ্লীল কথাবার্তা।
“সে যখন এগুলো লিখছিল তখন পেছন থেকে এক ছেলে দেখে তাকে ধরে আমার কাছে নিয়ে আসে। পরে আমি ওসিকে ফোন দিয়ে থানায় দিয়ে দেই। তার মোবাইলে মানুষকে জিম্মি করে টাকা আদায়েরও প্রমাণ পাওয়া যায়”, বলেন সংসদ সদস্য।