মেয়েসহ ৭৫ বছরের বৃদ্ধের বসবাস প্রতিবেশীর গোয়ালঘরে

নিজের ঘর না থাকায় বরগুনার বেতাগী উপজেলায় ৭৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ তার ১৪ বছরের মেয়েকে নিয়ে বাস করছেন প্রতিবেশীর গোয়ালঘরে।

বরগুনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2021, 04:07 PM
Updated : 16 Dec 2021, 07:23 AM

মকবুল হাওলাদার নামের ওই বৃদ্ধ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জিলবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা।

দরিদ্র এই বৃদ্ধের দিন কাটে মানুষের কাছে হাত পেতে। নিজ ভিটায় ঘর তোলার সামর্থ্য তার নেই। প্রতিবেশীর গোয়ালঘরের স্যাঁতসেঁতে মেঝেতে বিছানো খড়কুটা আর ছেঁড়া কম্বল বাবা-মেয়ের ভরসা।

মকবুল হাওলাদার জানান, সাত বছর আগে তার স্ত্রী মারা যান। তখন তিনি মেয়েকে নিয়ে একটি ছোট্ট কুঁড়েঘরে বসবাস করতেন। কিন্তু ছয় মাস আগে সে ঘরটিও বৃষ্টি আর বাতাসে ভেঙে গেছে। পরে মেয়েকে নিয়ে ঠাঁই নেন প্রতিবেশী খালেক হাওলাদারের গোয়াল ঘরে। প্রায় ছয় মাস ধরে সেখানেই জীবনযাপন করছেন তারা।

বৃদ্ধের দিন কাটে মানুষের কাছে হাত পেতে। পেটের দায়ে রোগা শরীর নিয়ে লাঠি এবং মেয়ের কাঁধে ভর দিয়ে খাবারের তাগিদে তাকে ছুটতে হয় গ্রাম থেকে গ্রামে।

পুরনো কাপড়-চোপড় আর কিছু হাঁড়ি-পাতিল নিয়ে গোয়ালঘরে শেষ বয়সের সংসার পেতেছেন এ বৃদ্ধ।

কান্নাভেজা চোখে মকবুল হাওলাদার বলেন, “খুব কষ্টে আছি আমি ও আমার মেয়ে। শীতের রাতে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। শরীর থরথর করে কাঁপে। অসুস্থ থাকলেও টাকার অভাবে ওষুধ কিনতে পারি না। টাকার অভাবে ভালো কিছু খেতে পারি না। এই জীবন আর ভালো লাগে না।”

প্রতিবেশী সেলিম মিয়া বলেন, “বৃদ্ধ মকবুল ও তার মেয়ে আসলেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাকে আর্থিক সহায়তা ও একটি সরকারি ঘর দেওয়ার দাবি জানাই।”

বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুহৃদ সালেহীন বলেন, “বৃদ্ধ মকবুল হাওলাদার ও তার মেয়ের মানবেতর জীবনযাপনের বিষয়টি জানতে পেরেছি। এই যুগেও একজন মানুষ তার পরিবার নিয়ে গোয়াল ঘরে থাকে; এটি কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়।

“এই পরিবারকে সামাজিকভাবে পুনর্বাসন করার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বেতাগী উপজেলা প্রশাসন তা নেবে।”

তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে বৃদ্ধকে কোনো মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়নি। তবে খুব শিগগির তাকে মানবিক সহায়তা দেওয়া হবে। শীতের কম্বল দেওয়ার পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা ভাতার আওতায় আনার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।