করোনাকালে মানুষের পাশে ‘সুখী কিশোরগঞ্জ’

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে কিশোরগঞ্জে মানুষের পাশে থেকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সুখী কিশোরগঞ্জ’।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিমারুফ আহমেদ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Sept 2021, 01:21 PM
Updated : 9 Sept 2021, 01:21 PM

গত বছরের মাঝামাঝি এই সংগঠনটি কিশোরগঞ্জ সদরে কার্যক্রম শুরু করে। করোনাভাইরাস আক্রান্তদের বাড়িতে বিনামূল্যে ও স্বেচ্ছাশ্রমে অক্সিজেন সেবা পৌঁছে দেওয়া, বিভিন্ন এলাকায় সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে করোনাভাইরাসের টিকাদানে উদ্বুদ্ধকরণ, বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশন করার মাধ্যমে সংগঠনের কর্মীরা মানুষের ভরসার স্থল হয়ে উঠেছে।

সংগঠনটির অন্যতম উদ্যোক্তা ও প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক ডা. খালেকুল ইসলাম ববি জানান, গত বছরের ১৭ জুন ডেঙ্গু রোধে প্রথম কার্যক্রম শুরু করে সংগঠনটি। এর অংশ হিসেবে পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে এডিস মশার জন্মস্থল বিনাশ, পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও ওষুধ ছিটানো কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

“পরে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা দিতে গড়ে তোলা হয় অক্সিজেন ব্যাংক।”

অক্সিজেন কার্যক্রমের সমন্বয়কারী এহতেশামুল হুদা মুনাব্বী বলেন, “গত ১৪ জুলাই কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত আমরা ৩০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ৩৫টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছি। করোনায় আক্রান্তদের যারা হাসপাতালে যেতে অপারগ এবং মুমূর্ষু এমন আনুমানিক দুইশত রোগীকে আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে অক্সিজেন সেবা প্রদান করেছি।”

করোনায় আক্রান্ত হওয়া বর্ষীয়ান শিক্ষাবিদ অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জালাল আহমেদ বলেন, “আমি ও আমার স্ত্রী করোনা আক্রান্ত হয়েছিলাম। তখন এই সংগঠনের কর্মীরা আমাদের অক্সিজেন সেবা প্রদানসহ সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নেয়।”

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান মামুন আল মাসুদ খান বলেন, “আমি ও আমার পরিবারের কয়েকজন আক্রান্ত হয়েছিলাম। এই সংগঠন থেকে বাড়িতে এসে স্বেচ্ছা শ্রমে অক্সিজেন সেবা দিয়েছে। শুধু আমি নই, করোনার দুঃসময়ে আরও অনেক অসুস্থ মানুষকে তারা অক্সিজেন সহায়তা করেছে।”

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রোটারিয়ান মাহবুব রানা বলেন, “সস্ত্রীক করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর অনেকটা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। পরে এই সংগঠনটির কথা জানতে পেরে তাদের সাথে যোগাযোগ করি। তাদের সহায়তায় বুকে সাহস পাই।”

টিকার রেজিস্ট্রেশন কাজের সমন্বয়কারী মো. জাকির হোসেন রাজীব বলেন, “টিকার রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমে আমরা প্রান্তিক মানুষের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। আমরা ‘সুখী কিশোরগঞ্জ’ সংগঠনের পক্ষ থেকে সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নির্ধারিত স্থানে টিকা নিতে আগ্রহী মানুষের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে সাথে সাথে প্রিন্ট করা রেজিস্ট্রেশন ফর্ম হাতে ধরিয়ে দিয়েছি।”

এ পর্যন্ত তারা ১০ হাজার মানুষের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন বলে তিনি জানান।

সদর উপজেলার সবকটি ইউনিয়নের পর এখন তারা কিশোরগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে রেজিস্ট্রেশনের কাজ করছেন বলে জানান।

লতিবাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বলেন, “আমাদের ইউনিয়নের খেটে খাওয়া মানুষেরা টিকার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে বিভ্রান্তিতে ছিল, অনেকের জানাই ছিল না, অনেকেরই মোবাইল ফোন নেই। এই সংগঠনের কার্যক্রমের কারণে সহজেই সাধারণ মানুষ টিকার রেজিস্ট্রেশন করাতে পেরেছে।”

মহিনন্দ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনসুর আলী বলেন, এই সংগঠনের কর্মীরা মাঠ পর্যায়ে না আসলে হয়ত অনেকের পক্ষেই রেজিস্ট্রেশন করা ও টিকা নেওয়া সম্ভব হতো না।

‘সুখী কিশোরগঞ্জ’ সংগঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা লুৎফুল্লাহ হোসাইন পাভেল বলেন, সুখী কিশোরগঞ্জ একটি সেবামূলক, অরাজনৈতিক ও অবাণিজ্যিক উদ্যোগ। কিশোর তরুণদেরকে ভালো কাজের সাথে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যেই লেখক হুমায়ুন আহমেদের ‘সুখী নীলগঞ্জ’ নামটিকে উপজীব্য ধরে সুখী কিশোরগঞ্জ নামটি গ্রহণ করা হয়েছে।

“আমরা নিজেদের ব্যক্তিগত অর্থায়ন এবং বন্ধু-বান্ধব ও শুভানুধ্যায়ীদের সহায়তায় এই কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আমরা আশা করি, সেবাধর্মী এবং উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জকে একটি সুখী এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে আরও বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করব।”