শীতলক্ষ্যায় লঞ্চ ডুবি: রঙ পাল্টেও পার পেল না কার্গোটি

শীতলক্ষ্যা নদীতে ডুবে যাওয়া যাত্রীবাহী লঞ্চকে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগে একটি কার্গো জাহাজ খুঁজছিল আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রঙ পাল্টে চার দিন আড়ালে থাকতে পারলেও শেষ পর্যন্ত ঠিক ধরা পড়েছে সেটি।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 April 2021, 06:38 PM
Updated : 8 April 2021, 06:38 PM

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় নোঙর করা অবস্থায় বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত কার্গো জাহাজ এসকেএল-৩ আটক করে কোস্টগার্ড।

জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ্ জানান, যাত্রীবাহী লঞ্চকে ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দেওয়ার ঘটনায় কার্গো জাহাজটি আটক করেছে কোস্টগার্ড সদস্যরা। এ সময় কার্গোটির চালকসহ আটক করা হয়েছে ১৪ জনকে।

তিনি জানান, গজারিয়ায় জাহাজটির রঙ বদলে ফেলা হয়।

পরে নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ-পুলিশের প্রহরায় জাহাজটিকে নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ পুলিশ থানার সামনে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে নিয়ে আসা হয়।

ডুবে যাওয়া যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন সেদিন রাতে যাত্রী বোঝাই লঞ্চটিকে বাম দিক থেকে ধাক্কা দেয় কার্গোটি।

লঞ্চ ডুবির ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের গঠিত পৃথক তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার বেঁচে যাওয়া যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শী এবং নিহতদের স্বজনদের সাক্ষ্য নিয়েছে।

রোববার সন্ধ্যার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের বিআইডব্লিউটিএ টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীবাহী লঞ্চ এমএল সাবিত আল হাসানকে শহরের কয়লাঘাট এলাকায় কার্গো জাহাজ এসকেএল-৩ পেছন থেকে ধাক্কা দিলে ডুবে যায়। লঞ্চের অনেকে সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও নিখোঁজ থাকেন অনেকে। পরে ৩৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় বেপরোয়া গতিতে কার্গো চালিয়ে লঞ্চ ডুবিয়ে ৩৪ যাত্রীকে হত্যার অভিযোগে মামলা করেছে বিআইডব্লিউটিএ।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কয়লাঘাট এলাকায় গণশুনীতে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান এলাকা থেকে স্বাক্ষ্য দিতে আসা বেঁচে যাওয়া যাত্রী আলো জানান, সেদিনের দুর্ঘটনার কথা ভোলার নয়। জাহাজটি আমাদের লঞ্চকে ধাক্কা মেরে ডুবিয়ে দেয় । অনেক কষ্টে সেদিন প্রাণে বেঁচেছি। বেপরোয়া জাহাজ চালানোর দায়ে তদন্ত কমিটির কাছে সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দাবি করেছেন তিনি।

 ওই সময় নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুতে নিরাপত্তা কর্মীর দায়িত্ব পালন করছিলেন সিরাজদিখানের আনিস। তিনি জানান, জাহাজটি বেপরোয়া গতিতে চলছিল। ওটিকে তিনবার সংকেত দেওয়া হলেও তা থামেনি। লঞ্চটিকে ধাক্কা দেয়ার কথা শুনানীর সময় জানিয়েছেন তিনি।

বন্দরের কদমরসুল এলাকার সাইরুল জানান, কার্গেটি লঞ্চের বাম দিকে ধাক্কা দেয়। এতে লঞ্চটি ডান দিকে কাত হয়ে ডুবে যায়। তিনি এবং তার স্ত্রীকে অন্য একটি নৌকা উদ্ধার করে। কিন্তু শ্যালিকা জিবু পানিতে তলিয়ে যায়। তিনি এর সুষ্ঠু বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।

গণশুনানী শেষে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও যুগ্ম সচিব আবদুস সাত্তার শেখ জানান, তারা ২৬ জনের বক্তব্য নিয়েছেন। আগামী সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেবেন বলে উল্লেখ করেন।

জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও সদরের ইউএনও নাহিদা বারিক বলেন, ২৬ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

এদিকে নৌ-পুলিশের সুপার মিনা মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, কোস্টগার্ড কার্গো জাহাজ ও এটির মাস্টারসহ ১৪ জনকে তাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আটক হওয়া ব্যক্তিরা হলেন -জাহাজের মাস্টার নড়াইলের লোহাগড়ার ওয়াহিদুজ্জামান (৫৫), চালক গোপালগঞ্জের কাশিয়ানির মজনু মেল্লা (৩৮), সুকানি ফরিদপুরের আলফা ডাঙ্গার আনোয়ার মল্লিক (৪০), নড়াইলের লোহাগড়ার নাজমুল মোল্লা (৩০) ও ফারহান মোল্লা (২৭), মো.আব্দুল্লাহ (৩০), রাজিবুল ইসলাম (২৭) আলী শেখ (১৮), মো. সাগর (১৯) ও বাঁশগ্রামের বাশার শেখ, পটুয়াখালীর গলাচিপার হৃদয় হাওলাদার (২০), গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর নূর ইসলাম (৩৫), খুলনা সদরের সাকিব সরদার (১৮) ও শরীয়তপুরের নড়িয়ার মো. আফসার ।