তারা পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের ছয় দফা দাবি পূরণে উদ্যোগী না হলে তারা পরবর্তী কর্মসূচিতে যাবেন।
তিন দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গেরুয়া এলাকায় স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের পরে নিরাপত্তার দাবিতে শনিবার দিনভর বিক্ষোভ দেখিয়ে তালা ভেঙে হলে ঢুকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। রবি ও সোমবার তাদের সঙ্গে যোগ দেন আরও অনেকে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি সরকার ও রাজনীতি বিভাগের (৪৫তম ব্যাচ) ছাত্রী সামিয়া লিতু সোমবার সকাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগের নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করেছে। আজকের মধ্যে যেন বাকি হলগুলো খুলে দেওয়া হয়, সেজন্য গতকাল প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। তা মেনে না নিলে আমরা নতুন কর্মসূচিতে যাব।”
অন্যদিকে প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "প্রশাসনের মিটিং থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি স্ব স্ব হল প্রভোস্ট তার টিম নিয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলবে। সরকারি নির্দেশে এখনও হল বন্ধ রয়েছে, তারা যেন হল ত্যাগ করে।"
শিক্ষার্থীরা হল না ছাড়লে কর্তৃপক্ষ কী করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমরা মনে করি শিক্ষার্থীরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তারা চলে যাবে।"
দুপুরের আগেই প্রভোস্টরা তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে হলে হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা শুরু করেন।
শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রভোস্ট সোহেল আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা সরকারের উঁচু পর্যায়ের সিদ্ধান্তের আলোকেই শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে বলেছি। তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে এসেছি যে কোভিড-১৯ মহামারীর ঝুঁকি এখনও চলে যায়নি।
“ইউজিসি থেকে ইতোমধ্যে একটি বার্তা প্রকাশিত হয়েছে, শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার পর হল খুলে দেওয়া হবে।”
দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ও গতবছর ১৭ মার্চ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সেই সঙ্গে ক্যাম্পাসে দর্শনার্থী প্রবেশ এবং সব ধরনের অনুষ্ঠান ও জমায়েত নিষিদ্ধ' করে কর্তৃপক্ষ।
হল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ বাড়ি ফিরে গেলেও তাদের একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের গেরুয়া, আমবাগান, ইসলামনগরসহ বিভিন্ন গ্রামে বাসা ভাড়া নিয়ে এবং মেসে থাকতে শুরু করেন। এছাড়া জুলাই থেকে অনলাইনে ক্লাসও শুরু হয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় গেরুয়া এলাকায় স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধলে অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হন।
এর প্রতিবাদে কয়েকশ শিক্ষার্থী শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জড়ো হন এবং নিরাপত্তা চেয়ে এবং হল খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তারা নিজেরাই একে একে ১৬টি হলের সবগুলোর তালা ভেঙে ভেতরে ঢুতে পড়েন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে যে হিসাব পাওয়া গেছে, তাতে রোববারই চারশর বেশি ছাত্র ছেলেদের আটটি হলে উঠে পড়েছেন। তবে নিরাপত্তার কারণে মেয়েরা এখনও হলে থাকছেন না।
রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে সংবাদ সম্মেলন করে ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
তাদের দাবিগুলো হল- হামলার সাথে জড়িতদের নামে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা করা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা এখনও গেরুয়া এলাকায় অবস্থান করছেন, তাদের পুলিশি নিরাপত্তা দিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনা, হল খুলে দিয়ে সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা, হামলার সময় যারা আহত হয়েছেন, তাদের পাশাপাশি যারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা, ক্যাম্পাস ও আশেপাশের সকল শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নেওয়া এবং ক্যাম্পাসে ‘অস্থিতিশীলতা তৈরির দায়ভার’ বহন করা।
এর মধ্যে একটি দাবি ইতোমধ্যে পূরণ করেছে প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় রোববার সন্ধ্যায় অজ্ঞাতনামা ২৫০ জনের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় মামলা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা জেফরুল হাসান চৌধুরী।