বগুড়ায় জমে উঠেছে পুরাতন শীতবস্ত্র বেচাকেনা

শীত নামার সঙ্গে সঙ্গে উত্তরের জেলা বগুড়ায় পুরাতন শীতবস্ত্র বেচাকেনা জমে উঠেছে।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Dec 2020, 03:48 AM
Updated : 21 Dec 2020, 03:48 AM

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা এই কাপড়চোপড় স্বল্পমূল্যে কিনতে পারেন গ্রামগঞ্জের অল্প আয়ের মানুষেরা।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, জাপান, তাইওয়ান, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এসব শীতবস্ত্র এদেশে আমদানি হয়। 

বগুড়া জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা এসব কাপড় বিক্রি করছেন। ইতিমধ্যে শৈত্য প্রবাহ শুরু হয়েছে। তাই এসব শীতবস্ত্রের ভ্রাম্যমাণ দোকানে এখন উপচে পড়া ভিড়।

শুধু স্বল্প আয়ের মানুষ নয়, মধ্যত্তিরাও এখন পুরাতন শীতবস্ত্র কিনতে ভিড় আসছে এসব দোকানে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বগুড়া শহরের সাতমাথা, রেলওয়ে হকার্স মার্কেট সংলগ্ন এলাকা, রেললাইনের দুপাশে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লোকজন পুরানো শীতবস্ত্রের দোকানে ভিড় করছে। সব বয়সীদের শীতবস্ত্র ওইসব জায়গায় বিক্রি হচ্ছে।

১০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে এসব শীতবস্ত্র। পাইকারী দোকানিরা এসব শীতবস্ত্রকে রিকন্ডিশন গাড়ির সঙ্গে তুলনা করে থাকেন।

রেললাইন হাড্ডি পট্টিতে কথা হলো ভ্রাম্যমাণ শীতবস্ত্র বিক্রেতা আমজাদ হোসেনের সঙ্গে।

তিনি জানান, শিশুদের শীতবস্ত্র ১০ টাকা থেকে একশ টাকায় বিক্রি করছেন। ক্রেতাও অনেক। প্রতিদিন সাত থেকে আট হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে তার। ধনী-গরিব সবাই তাদের ক্রেতা।

জ্যাকেট ৫০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন বলে জানান হাড্ডিপট্টির এক দোকানের কর্মচারী সোবহান।  

সাতমাথার  রাজু  জানান, “সোয়েটার ২০ টাকা থেকে ৫শ টাকায় বিক্রি করছি। ক্রেতাও অনেক।”

শহরের জ্বলেশ্বরীতলার সাবিহা নামের এক ক্রেতা বলেন, অনেকটা নুতন মনে হয় এসব গরম কাপড়; দামও কম; কিন্তু মানের দিক থেকে অনেক ভালো। এসব পুরাতন কাপড় না থাকলে গরিব মানুষের খুবই কষ্ট হতো।

কথা হলো সাতমাথায় ভ্রাম্যমাণ দোকানের ক্রেতা ইলিয়াসের সঙ্গে।

তিনি বলেন, “সবাই পুরাতন কাপড় বললেও ক্রেতারা গরমের জন্য এসব কাপড় বেশ পছন্দ করে।” 

পুরাতন শীতবস্ত্র আমদানিকারী রংপুরের সাবিহুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এসব পুরাতন শীতকাপড় তার বাবা বিদেশ থেকে আমদানি করে আসছেন। উত্তরাঞ্চলের রংপুর থেকেই প্রথম এসব কাপড়ের ব্যাবসা শুরু হয়। পরে ছড়িয়ে পড়ে বগুড়াসহ অন্য জেলায়।

কম মুল্যের পুরাতন এসব কাপড় উত্তরের গরিব মানুষের ভরসা বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, দেশের শীত প্রধান এলাকা রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, লালমনিরহাটের বিক্রেতারা পাইকারিভাবে কিনে বিক্রি করছে এসব কাপড়।

“মানের দিক থেকে খুবই ভালো। ডিজাইনও আধুনিক। কিছু জ্যাকেট, সোয়েটার, কোট দেখে বোঝার উপায় নেই এসব পুরাতন। ঠিক রি-কন্ডিশন আমদানি করা গাড়ির মতো।”

তিনি জানান, আগে ইংল্যান্ড, আমেরিকাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে এসব কাপড় আমদানি করা হলেও এখন তাইওয়ান, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান থেকে আসছে।

পাইকারি বিক্রেতা ইদ্রিস আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আশির দশক থেকে পুরাতন শীতকাপড়ের ব্যবসা করছেন। চট্টগ্রামের বেশ কিছু ব্যবসায়ী এসব পুরাতন শীতকাপড় ইম্পোর্ট করে থাকেন। তাদের কাছ থেকে বেল হিসেবে কিনে এনে বগুড়া, নওগাঁ, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গাইবান্ধা জেলায় বিক্রি করে থাকি। তারা খুচরা হিসেবে শহর, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে বিক্রি করেন।

চট্টগ্রাম থেকে জ্যাকেট প্রতি বেল পাইকারি ১২ হাজার থেকে ২৪ হাজার টাকা, সোয়েটার প্রতি বেল সাত হাজার থেকে ১১ হাজার টাকা, শিশুদের কাপড় আট হাজার থেকে ১১ হাজার টাকায় কেনা হয় বলে তিনি জানান।