মৌলভাবাজারে মনু নদীতে মাছধরা উৎসব

মৌলভাবাজারের মনু নদীতে তিনদিনের ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরা উৎসব সোমবার শেষ হচ্ছে।

মৌলভাবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2020, 10:20 AM
Updated : 14 Dec 2020, 10:27 AM

এটি মূলত মাছ ধরা উৎসব হলেও এলাকাবাসীর মুখে মুখে এর নাম হয়েছে ‘হাট উৎসব’। কেউ কেউ বলেন ‘মনুর মাছ হাট’।

প্রতি বছর অগ্রাহায়ণ মাসে দিকে ধানকাটা শেষে দুই তিন গ্রামের মুরব্বীরা আলোচনা করে দিন নির্ধারণ করে নেমে পড়েন মাছ ধরতে।

মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর, পৃথিমপাশা ও শরিফপুর ইউনিয়নের মনু নদীর দুপড়ের হাজার হাজার মানুষ এক সঙ্গে মাছ ধরতে নামেন নদীতে।

কারো জালে মাছ আটকা পড়ছে আবার কারো জালে একেবারের মাছ ধরা পড়ছে না। তারপরও ঐতিহ্যবাহী উৎসবে নদীর দুপাড়ের মানুষের আগ্রহের কমতি নেই ।

কুলাউড়া পৃথিম পাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী বাকর খান হোসাইন বলেন, “তার ইউনিয়নে মনু নদীতে প্রায় বছরই গ্রামবাসী একত্রে মাছ ধরেন। এ বছর যে মাছ ধরা হচ্ছে এটা তারই অংশ। তবে এটা কোন সাংগঠনিক কাঠামোতে হয়না। মূখে মুখেই এর শুরু।”

কুলাউড়া হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্চু বলেন, “যারা নদীতে ‘মাছ ধরা উৎসবে’ নেমেছেন তারা কেই পেশাদার জেলে নয়। নানা পেশার মানুষ শখেরবসে তিন দিনের এই মাছ ধরা উৎসবে নদীতে নেমেছেন। এটি বহু বছর ধরে চলে আসছে।

“অগ্রহায়ণ মাসে কটারকোনার হাট বার থেকে প্রতিবছর টানা তিনদিন এ মাছ মারা উৎসবের আয়োজন করা হয়। এটিকে বর্তমানে মানুষ হাট উৎসব হিসেবে জানে।”

তবে কি কারণে হাট উৎসব তার সঠিক ইতিহাস নেই। স্থানীয়রা বলছেন, ডিসেম্বরের হাটবারে এটি শুরু হয় তাই হাট উৎসব, কেউ বলেন ‘হাত বাওয়া’ (হাত জাল দিয়ে মাছ ধরা) উৎসব। বহুকাল ধরে এটি চলে আসছে তাই এটি এই এলাকার ঐতিহ্যের একটি অংশ হিসেবে রুপ নিয়েছে।

শনিবার প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে মনু নদীর হাজিপুর ইউনিয়নের কটার কোনা বাজাররের মনু রেলওয়ে ব্রিজ এলাকা থেকে মাছ ধরা শুরু করেন।

দ্বিতীয় দিনে মাছ ধরা হয় কলিরকোনা ও রাজাপুরে। শেষ দিন সোমবার উজান দিকে ভারতীয় সীমান্তের কাছাকাছি শরিফপুরের বেলেরতল এলাকায় মাছ ধরা উৎসব শেষ হবে।

কেউ নৌকায়, কেউ বা কলাগাছের ভেলায় চেপে, আবার অনেকেই নদীর চরে অথবা শুকনো স্থান থেকে জাল দিয়ে মাছ ধরার চেষ্ঠা করেন। কেউ কেউ নদীতে নেমেও মাছ ধরেন।

‘মাছ হাট’ উৎসবটি নদীর বিভিন্ন বাঁকে, যে স্থানে ডহর বা গভীর রয়েছে সেসব স্থানেই চলে । এ দৃশ্য দেখতে নানা স্থান থেকে লোকজন ভিড় করেন নদীর দুপাড়ে।

হাজিপুর ইউনিয়নের মাথবপুরের সোবাহান মিয়া বলেন, তিনি দিনে প্রায় ৮/১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে উৎসব মূখর পরিবেশে তারা মাছ মারেন। এই মাছ ধরার জন্য অনেকে নতুন জাল ক্রয় করেন। এটি তাদের কাছে একটি আনন্দ। কারো জালে ধরা পরছে আইড়, কারো জালে মৃগেল, কারো ঘাসকাপ, বোয়াল, রুই, কাতল, কালো বাউশ, বাছা, বাঁশপাতা মাছ সহ নানা জাতের দেশীয় মাছ।

ওই এলাকার সত্যেন্দ্র মালাকার ও জীতেন্দ্র মামলাকার জানালেন,  এই উৎসবকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় অতিথি আপ্যায়ন বেড়ে যায়। মাছ ধরতে আত্মীয়রাও আসেন। অনেকেই আবার রান্নাকরা মাছ আত্মীয়র বাড়িতেও পাঠান।