রাজশাহীতে অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থানের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

রাজশাহীর বাগমারায় অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির (ইজিপিপি) অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে।  

বদরুল হাসান লিটন রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2020, 03:33 PM
Updated : 3 Dec 2020, 03:33 PM

উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নে এই প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন শ্রমিকরা।  

বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এই বিষয়ে অভিযোগ করেন দুইজন জব কার্ডধারী শ্রমিক।

তাদের অভিযোগ, তালিকায় তাদের নাম রয়েছে; কিন্তু তারা জানেন না এবং কাজও করেননি। এরপরও তাদের নামে দুই সপ্তাহের টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

এই কর্মসূচিতে কাজ করার জন্য শ্রমিকদের তালিকা করেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। প্রতিটি ওয়ার্ডে কাজ তদারক করেন সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য।

অভিযোগকারী শ্রমিকদের ভাষ্য, তাদের নাম তালিকায় থাকলেও তারা জানেন না। কিন্তু তাদের টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

তবে গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলমগীর সরকার এই প্রকল্পে কোনো অনিয়মের সুযোগ নেই বলে জানান।

অভিযোগকারী শ্রমিকরা হলেন, গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের গোয়ালকান্দি গ্রামের অধীর প্রামানিকের ছেলে শ্যামল কুমার প্রামানিক ও আফাজ উদ্দিরে ছেলে আসাদুল ইসলাম। এদের মধ্যে আসাদুলের নাম তালিকার ৭০ নম্বরে এবং শ্যামলের নাম তালিকার ৯০ নম্বরে রয়েছে।

আসাদুল ইসলাম বলেন, অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির তালিকায় তার না রয়েছে তা তাকে কেউ জানায়নি। ফলে তিনি কাজও করেননি। কিন্তু অন্য শ্রমিকদের কাছে শুনে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস (পিআইও) থেকে তালিকা তোলেন তিনি।

“সেখানে আমার নাম রয়েছে এবং দুই সপ্তাহের ১০ দিনের ২০০০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।”

একই অভিযোগ করেন শ্যামল কুমারও। তিনি কাজ না করলেও তার নামে ১০ দিনের দুই হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

টাকা কম দেওয়ার অভিযোগ

এদিকে, মির্জাপুর গ্রামের শামীম হোসেন বলেন, তিনি ১০ দিন কাজ করেছেন। তার জব কার্ডে ২০০০ টাকা মজুরি উল্লেখ করা হলেও তাকে দেওয়া হয়েছে ১৫০০ টাকা। গত বৃহস্পতিবার কৃষি ব্যাংকের হামিরকুৎসা শাখা থেকে তাকে এই টাকা দেওয়া হয়। বাকি টাকা ব্যাংকে কেটে রেখেছে বলে তাকে জানানো হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের একজন ওয়ার্ড সদস্য বলেন, এই ইউনিয়নে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পের তালিকায় ১৫৭ জন শ্রমিকের নাম রয়েছে। পাঁচটি টিমে তারা কাজ করবেন।

তিনি বলেন, “গত তিন সপ্তাহ কাজ করেছেন শ্রমিকরা। প্রতিটি টিমে ৩১ জন করে থাকার কথা। কিন্তু তাদের এলাকার টিমে ১০ জন কাজ করেছে। অন্য টিমগুলোতেও ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক কাজ করেছে বলে শুনেছি।”

ওই ওয়ার্ড সদস্য জানান, নিয়ম অনুযায়ী সপ্তাহে পাঁচদিন শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত কাজ করার সুযোগ পান। প্রতিদিন তাদের মজুরি ২০০ টাকা। বৃহস্পতিবার তারা নিজে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঁচ দিনের ১০০০ টাকা উত্তোলন করবেন।

গত ১২ নভেম্বর থেকে চলতি মৌসূমের প্রকল্প শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ২৬ নভেম্বর শ্রমিকদের প্রথম দুই সপ্তাহের মজুরি দেওয়া হয়। টাকা তুলতে প্রত্যেক শ্রমিককে ব্যাংকে যাওয়ার নিয়ম থাকলে সেটি মানা হয় না। ইউপি চেয়ারম্যান ও সুপারভাইজার সুপারিশ করে একসঙ্গে একাধিক শ্রমিকের মজুরি উত্তোলন করেন।

তবে শ্রমিকের উপস্থিতি ছাড়া টাকা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কৃষি ব্যাংকের হামিরকুৎসা শাখার ব্যবস্থাপক শামীমুজ্জামান।

তিনি বলেন, ব্যাংকে কোনো অনিয়ম হয়নি। অনিয়ম যদি করে থাকে তবে চেয়ারম্যান-মেম্বাররা করতে পারেন। কারণ তারাই শুধু জানেন কে কাজ করেছে বা করেনি।

তবে ৩২ জন শ্রমিক ব্যাংকে না আসায় তাদের টাকা ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

৫০০ টাকা কেটে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য ব্যাংকে হিসাব খোলা হয়েছে। প্রতিদিন মজুরির ৫০ টাকা করে কেটে রাখার নিয়ম রয়েছে। সে টাকা প্রকল্প শেষে শ্রমিকরা একসঙ্গে পাবে। সে হিসেবে ১০ দিনের ৫০০ টাকা কেটে রাখা হয়।

গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলমগীর সরকার বলেন, “পাঁচটি টিমের সভাপতি পাঁচজন ওয়ার্ড সদস্য। কে কে কাজ করছে সে তালিকা তারা পাঠান। আমি শুধু অনুমোদন দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে পাঠিয়ে দিই। এখানে কোনো অনিয়ম করার সুযোগ নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফ আহম্মেদ বলেন, অভিযোগ পেয়েছেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এক শ্রমিকের টাকা অন্য কারও তোলার সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই ধরনের সুযোগ আছে। তবে সেটি হয়েছে কিনা তা তদন্ত করে দেখার জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।