কাঞ্চনজঙ্ঘায় মুগ্ধ ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ

শীতের শুরুতেই ঠাকুরগাঁও থেকে খালি চোখে দেখা যাচ্ছে পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চজঙ্ঘার চূড়া।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিমো. শাকিল আহমেদ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Oct 2020, 01:19 PM
Updated : 30 Oct 2020, 01:19 PM

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বহু মানুষ প্রতিবছর পঞ্চগড় গিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখে আসেন। কিন্তু এখন ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ নিজ জেলা থেকেই উপভোগ করছে এই শৃঙ্গের সৌন্দর্য।

মনোরম এই দৃশ্য দেখতে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের বুড়িরবাঁধ এলাকায় ভিড় করছে বিভিন্ন এলাকার মানুষ।

আবহাওয়া বিজ্ঞান সংশ্লিষ্টদের মতে, বাতাসে ধূলিকণা ও কুয়াশার কারণে সবসময় দূর থেকে এই চূড়া দেখা যায় না। বাংলাদেশের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। তবে কোনো কোনো সময় ঠাকুরগাঁও থেকেও দেখা যায়। এবারও শীতের আগে বৃষ্টির কারণে বাতাসে ধূলিকণা কম থাকায় ঠাকুরগাঁও থেকে এই শৃঙ্গ দেখা যাচ্ছে। এর আগেও বিভিন্ন সময় এই জেলা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা গিয়েছিল।

বিশ্বের উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গগুলোর একটি কাঞ্চজঙ্ঘা অবস্থিত ভারতের সিকিম রাজ্য ও নেপালের সীমান্ত অঞ্চলে।

ঠাকুরগাঁওয়ের বুড়িরবাঁধ ছাড়াও শহরের চৌরাস্তা, বাসস্ট্যান্ড, আর্টগ্যালারী, টাংগন ব্যারেজসহ জেলার পাঁচ উপজেলা থেকে উত্তর দিকে তাকালেই কাঞ্চনজঙ্ঘার উঁকি দেওয়ার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এই পর্বতচূড়া অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বেশি দৃশ্যমান।

শুক্রবার বুড়িরবাঁধে গিয়ে দেখা যায়, কাঞ্চজঙ্ঘা স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। আর এই দৃশ্য একনজর উপভোগ করার জন্য বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভিড় করছে। কেউ মোবাইল ফোন দিয়ে ছবি তুলছে, কেউবা ক্যামেরা দিয়ে কাঞ্চজঙ্ঘার ছবি তুলছে।

ছবিটি তুলেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মো. শাকিল আহমেদ

২০১৩ সালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা আকচা ইউনিয়নের বুড়ির বাঁধ এলাকা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা চূড়ার ছবি তুলেছিলেন প্রকৃতিপ্রেমী রেজাউল হাফিজ রাহী। পরে সেই ছবি ফেসবুকে আপলোড করলে তা ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর থেকে বিভিন্ন এলাকার মানুষ এসে ভিড় করতে শুরু করে ঠাকুরগাঁওয়ে।

এর আগে শুধু পঞ্চগড় থেকে বিশেষ একটা সময়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় বলে জানত সবাই।

বুড়ির বাঁধ এলাকার জগদীশ চন্দ্র বলেন, গত বছর শীতের তীব্রতা বেশি থাকায় কুয়াশার মধ্যে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়নি। তবে এবার অক্টোবরের শেষ সময়ে খালি চোখেই তা স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। আর এ দৃশ্য দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকার মানুষ এসে ভিড় করছে।

দিনাজপুর থেকে বুড়ির বাঁধে আসা ইদ্রিস আলী বলেন, “গত বছর কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য দেখার জন্য ঠাকুরগাঁও এসেছিলাম, কিন্তু সেসময় শীত বেশি থাকায় দেখতে পাইনি। তবে এবার এসে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য দেখতে পেলাম। দেখে অনেক ভালো লাগল; মনে হয় যেন কাঞ্চনজঙ্ঘার কাছে গিয়ে দেখে আসলাম।”

টাংগন ব্যারেজ এলাকার মনোয়ার হোসেন বলেন, সকাল ৬টা থেকে সূর্যকিরণ যখন বাড়তে থাকে তখন ঠাকুরগাঁও থেকে স্পষ্টভাবে কাঞ্চনজঙ্ঘা উঁকি দিতে শুরু করে। সকাল ১০টা পর্যন্ত বেশ ভালো দেখা যায়। সময় বাড়ার সাথে সাথে আস্তে আস্তে ঝাপসা হতে থাকে। তবে শেষ বিকালে সূর্যকিরণ আবার যখন তির্যক হয়ে পড়ে বরফের পাহাড়ে তখন অনিন্দ্য সুন্দর হয়ে ধরা দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অরুনাংশু দত্ত টিটো বলেন, “লোকমুখে শুনে সকাল ৮টার দিকে উঠেই ভাবলাম বাড়ির ছাদ থেকে হিমালয়ের একটি চূড়া কাঞ্চজঙ্ঘা দেখব। ভাবতেই পারিনি এত সুন্দরভাবে দেখা যাবে; অভিভূত হয়ে গেলাম।”

তিনি বলেন, “ডিএসএলআর ক্যামেরা না থাকলেও মেবাইলে ছবি তুলে নিয়েছি কাঞ্চনজঙ্ঘার। সাথে আমার প্রিয় জন্মস্থান ঠাকুরগাঁওয়ের কিছু ছবি। শহরটিও যেন সবুজ অরণ্যে ঘেরা। কিছুটা উঁচু স্থানে উঠলেই ঠাকুরগাঁও শহর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার এই সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।”

ছবিটি তুলেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মো. শাকিল আহমেদ

প্রকৃতিপ্রেমী রেজাউল হাফিজ রাহি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতকাল সকালে বুড়িরবাঁধে গিয়ে বিশ্বেরর তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি আবার ক্যামেরাবন্দি করেছি। এরপর তা ফেইসবুকে পোস্ট করি। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে নয়; ঠাকুরগাঁও থেকেও কাঞ্চনজঙ্ঘা চূড়া দেখা যায়।”

কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য ঢাকা থেকে এসেছেন ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মজুমদার।

তিনি বলেন, “ঠাকুরগাঁও শহর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়; এমন একটি ছবি কিছুদিন আগে ফেইসবুকে দেখেছি। তাতে অনুপ্রাণিত হয়ে আজ সকালে ঠাকুরগাঁও থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখেছি। খুবি ভাল লাগল।”

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রচলিত ধারণা ছিল শুধু পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। তবে এখন সেটি ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমানে ঠাকুরগাঁও শহরসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকেও কাঞ্চনজঙ্ঘা চূড়া স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, তাও আবার খালি চোখে।

“আমি নিজেও এই অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করেছি।”

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিভিন্ন কলকারখানার ধোঁয়া, ধূলিকণা, কুয়াশা প্রভৃতির কারণে দূর থেকে এই শৃঙ্গ সব সময় দেখা যায় না। এবার করোনাভাইরাসের কারণে বহু মিল-কারখানা বন্ধ ছিল; কয়েকদিন আগে ভারি বর্ষণের কারণে আকাশ ধূলিকণামুক্তও রয়েছে। তাই ঠাকুরগাঁও থেকেও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে।”