বঞ্চিতদের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়তে চান খুলনার আঁখি

ঝরে পড়া শিক্ষার্থী ও বঞ্চিতদের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়তে চান জাতিসংঘের ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ স্বীকৃতি পাওয়া খুলনার আঁখি আক্তার।

শুভ্র শচীন খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2020, 06:42 PM
Updated : 3 Oct 2020, 06:42 PM

দরিদ্র পরিবারের মেয়ে ১৭ বছরের আঁখি করোনাভাইরাস মহামারী শুরু হলে মাস্ক বানিয়ে বিনা মূল্যে বিতরণ করেন। এই কাজের জন্য গত ১৯ অগাস্ট বিশ্বমানবতা দিবস উপলক্ষে আঁখিকে ‘রিয়েল লাইফ হিরোর’ স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ। সে সময় বাংলাদেশের চারজন এই স্বীকৃতি পান। আঁখি তাদের একজন।

আঁখি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য পোশাক কারখানা তৈরি করে নারী উদ্যোক্তা হতে চাই। আর স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিশুদের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ সেন্টার করতে চাই। বাবা-মায়ের সেবা এবং ছোট ভাইটাকে পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করতে চাই।”

আঁখি খুলনার রূপসা উপজেলার বাগমারা দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রথামিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। পরে তার বাবা মাসুদ মোল্লা অসুস্থ হলে বড় বোনের সঙ্গে চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত কারখানায় কাজ শুরু করেন।

এই কাজ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বছর দুই আগে আবেদা সুলতানা নামে এক নারী তার সহায়তায় এগিয়ে আসেন। আবেদা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের ‘জীবনের জন্য’ প্রকল্পের কর্মী।

আবেদা বলেন, “ঝুঁকিপূর্ণ চিংড়ি প্রক্রিয়াকরণ কাজের বদলে আঁখি সেলাই কাজের প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহ দেখায়।

“আমরা তাকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা দিই। আঁখি খুব দ্রুত কাজ শিখে ফেলে। শেখার পাশাপাশি আঁখি নিজেই বাচ্চাদের ফ্রকসহ অন্যান্য পোশাকও তৈরি শুরু করে। পরে তাকে আমরা সেলাই মেশিন ও কাপড় দিলে সে ব্যবসা শুরু করে।”

এরই মধ্যে করোনাভাইরাস মহামারী এসে পড়লে আঁখির ছোট্ট ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।

আবেদা বলেন, “ওদিকে বাজারে মাস্কের অভাব দেখা দেয়। আঁখি নিজেই মাস্ক বানানো শুরু করে। একেকটি মাস্ক ১০ টাকা। যাদের ১০ টাকা দেওয়ারও সামর্থ্য যাদের নেই, তাদের বিনামূল্যে মাস্ক বিতারণ করে আঁখি। এ ঘটনা এলাকায় সাড়া ফেলে।”

এই গল্প ‘রিয়েল লাইফ হিরোস’ ক্যাম্পেইন চলার সময় জাতিসংঘের আঞ্চলিক দপ্তরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন আবেদা সুলতানা।

আঁখি বলেন, “এই স্বীকৃতিতে আমি খুব খুশি। এখন অনেকেই কারখানা করার জন্য বিভিন্নভাবে সহায়তা দিচ্ছেন। আমাদের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদীর স্ত্রী শারমিন সালাম ইতোমধ্যেই সহায়তা দিয়েছেন।”

খুলনা-৪ (রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, “ছোট্ট আঁখির আন্তর্জাতিক যে অর্জন, তা শুধু খুলনার নয়, এটা দেশের জন্য গর্ব।

“আমার স্ত্রী শারমিন সালাম ব্যক্তিগত উদ্যোগে আঁখিকে ১৩টি অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক সেলাই মেশিন দিয়েছে। এ মেশিনগুলো দিয়ে ছেলেদের প্যান্ট, মেয়েদের পোশাকসহ সব সেলাইয়ের কাজ করা যায়। আঁখিদের নিজেদের কোনো বাড়িঘর নেই। তাদের থাকার ঘর ও মেশিন রাখার জন্য শেড তৈরিসহ অন্যান্য কাজেও সহায়তা করা হবে।”

আঁখির মা আনোয়ারা বেগম এবং বাবাও বেশ অসুস্থ বলে জানিয়েছেন আঁখি।

আঁখি বলেন, “মায়ের পিঠের হাড় ক্ষয় হয়ে যাওয়ায় চিংড়ি প্রক্রিয়াকরণ খারখানায় আগের মত কাজ করতে পারেন না। বাবাও বেশ অসুস্থ। বড় বোন মরিয়ম আমার কাজে সহায়তা করেন।”

আঁখির ছোট ভাই তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে।

জাতিসংঘের স্বীকৃতি সম্পর্কে আঁখির মা আনোয়ারা বেগম বলেন, “গ্রামের সবাই খুব খুশি। সবাই আমার মেয়েকে নিয়ে গর্ব করছেন।”