সেই ভিক্ষুক উঠলেন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া পাকা বাড়িতে

করোনাভাইরাস মহামারীতে কর্মহীনদের সহায়তায় দান করে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী শেরপুরের সেই ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বাড়িতে উঠেছেন। 

শেরপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2020, 01:07 PM
Updated : 16 August 2020, 01:07 PM

রোববার দুপুরে নবনির্মিত এই বাড়ির চাবি আনুষ্ঠানিকভাবে নাজিম উদ্দিনের (৮০) কাছে হস্তান্তর করেছেন শেরপুরের জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব।

নিজের ভাঙা ছাপড়া ঘর মেরামতের জন্য দীর্ঘদিন ধরে জমানো টাকা নাজিম উদ্দিন তুলে দিয়েছিলেন করোনাভাইরাসে অবরুদ্ধ কর্মহীন মানুষের সহায়তায়।

দেশব্যাপী আলোড়ন তোলা সেই ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাজিম উদ্দিনকে জমি এবং বাড়ি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। 

বাড়ি পেয়ে উচ্ছ্বসিত নাজিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “মনে করন আমি তো করোনার জন্য ট্যাহাডা দিছি। সেখানে খুশি হইয়া প্রধানমন্ত্রী আমাকে যে উপহার দিছে আমি খুব খুশি হইছি। ঘরবাড়ি সব দিল। আমি আর কোনো কিছু চাই না। আমি দোয়া করি আল্লাহ তারে [প্রধানমন্ত্রী] দীর্ঘদিন বাঁচায়ে রাখুক। যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন আল্লাহ তারে ‘রাজত্ব’ করার সুযোগ দিক।”

শেরপুরের জেলা প্রশাসক আনারকলি মাহবুব রোববার ঘরের চাবি নাজিম উদ্দিনের হাতে তুলে দেন

তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সামনে থেকে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুব দয়ালদার মানুষ; তারে একটু দেখবার জন্য আমার মনটা কান্দে।”

বাড়ির চাবি হস্তান্তরের সময় ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসএমএ ওয়ারেজ নাইম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জয়নাল আবেদীন, থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিকসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুধীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের নিভৃত পল্লি গারো পাহাড় সংলগ্ন গান্ধীগাঁও গ্রামে একখণ্ড খাস জমির ওপর ঘরটি নির্মাণ করা হয়। ইটের গাঁথুনিতে টিনশেড এই বাড়িতে রয়েছে দুটি কক্ষ। দুপাশে লোহার গ্রিল দিয়ে বারান্দা করা হয়েছে। রয়েছে রান্নাঘর, গোসলখানা ও শৌচাগার। 

বাড়িটি দেখতে প্রায় প্রতিদিনই আশপাশের এলাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আসছে এখানে।  

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক এক খণ্ড জায়গাতে টিনশেড হাফ বিল্ডিং  নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। নাজিম উদ্দিন যে ঘরটিতে এতদিন ছিলেন সেটি সরকারের খাস জমিতে ছিল। এটি ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিনও এতদিন জানতেন না। সরকারের এই খাস জমিটিও নাজিম উদ্দিনের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।”

নাজিম উদ্দিন যে ঘরে থাকতেন সেই জমি কিছুটা সম্প্রসারণ করে ১৫ শতাংশ জমি তার নামে সরকার বরাদ্দ দিয়েছে বলে ইউএনও জানান।  

নাজিম উদ্দিন নিজের ঘরের ফলক উন্মোচন করছেন

তিনি আরও জানান, পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ তার বাড়িতে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছে। বাড়ির পাশে গান্ধীগাঁও বাজারে পাকা দোকান ঘর করে দিয়ে ব্যবসা করার জন্য  জেলা প্রশাসক নগদ ২০ হাজার টাকাও দিয়েছেন, যাতে নাজিম উদ্দিনকে আর ভিক্ষাবৃত্তি করতে না হয়।

এছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান এসএমএ ওয়ারেজ নাইমের পক্ষ থেকে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাও উপহার দেওয়া হয় তাকে, বলেন ইউএনও।

এরইমধ্যে নজিমুদ্দিন ও তার মেয়ের চিকিৎসার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও ইউএনও রুবেল জানান। 

জেলা প্রশাসক আনারকলি মাহবুব বলেন, “আমরা সবাই আনন্দিত। আমরা তার মহানুভবতার জন্য তার কাছে কৃতজ্ঞ। ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন ঘর তৈরি করার জন্য অনেক কষ্টে ১০ হাজার টাকা সঞ্চয় করেছিলেন। সেই টাকা তিনি সরকারি করোনা তহবিলে দান করে অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন।

“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিরল সেই দৃষ্টান্তের স্বীকৃতিস্বরূপ জায়গাসহ থাকার ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আমাদের মহানুভব ব্যক্তি নাজিম উদ্দিনের হাতে আজকে পাকা বাড়ির চাবি তার হাতে তুলে দিলাম।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সামনে থেকে দেখার নাজিম উদ্দিনের ইচ্ছা বিষয়ে তিনি বলেন, “এ বিষয়টা আমার জানা নেই। তিনি যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান তাহলে আমরা যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারি।”

নাজিম উদ্দিনের হাতে ঘরের চাবি হস্তান্তরের পর উপস্থিত সবাই দোয়ায় অংশ নেন

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সারাদেশে অবরুদ্ধ অবস্থায় কর্মহীন হয়ে পড়া হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষের সহায়তার জন্য তহবিল সংগ্রহ করছিল উপজেলা প্রশাসন। গত ২১ এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদের হাতে নিজের ঘর করার জন্য খুব কষ্টে জমানো ১০ হাজার তুলে দেন নাজিম উদ্দিন, যিনি ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

গান্ধীগাও গ্রামের মৃত ইয়ার উদ্দিনের ছেলে নাজিম উদ্দিনের দানের ওই ঘটনা সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করে। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেরপুরের জেলা প্রশাসককে এই বৃদ্ধের জন্য সরকারি জমি দান এবং তার উপর পাকাঘর করে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনা মোতাবেক ২২ এপ্রিল নাজিম উদ্দিনকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সংবর্ধনা দেওয়ার পাশাপাশি তার হাতে তুলে দেওয়া হয় নগদ ২০ হাজার টাকা। এরপর তার বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রশাসন খাস জমি বাছাই করে।