জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জেলার অন্তত দেড়লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার কয়েকটি আঞ্চলিক সড়কে পানি উঠেছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান হাবিবুর রহমান জানান, গত দুদিন জেলার নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর পয়েন্টে পদ্মানদীর পানি ব্রেপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও শুক্রবার সকাল ১১টায় সুরেশ্বর পয়েন্টে পদ্মানদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।
সরেজমিনে বিভন্ন এলাকা ঘুরে এবং জেলা ত্রাণ শাখা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জেলার বন্যা কবলিত মানুষের দুর্ভোগের চিত্র পাওয়া গেছে।
জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ শাখার প্রধান সহকারী রাকিব হোসেন জানান, শরীয়তপুর শহরসহ নড়িয়া, জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার ৫১টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। দেড় শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নড়িয়া-মুলফৎগঞ্চ সড়ক, বিঝারী-নড়িয়া সড়ক, নড়িয়া-বাসতলা সড়ক, ঘড়িসার সুরেশ্বর সড়ক, কোটাপাড়া-নশাসন সড়কসহ বেশ কয়েকটি সড়ক নতুন করে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
এছাড়া ভেদরগঞ্জ ও জাজিরা উপজেলার চরাঞ্চলের ৬০ শতাংশ পানির নিচে তলিয়ে গেছে বলে রাকিব হোসেন জানান।
এসব এলাকার কয়েকটিতে সরেজমিনে দেখা গেছে, লোকজন গবাদি পশু নিয়ে উঁচু রাস্তা ও সেতুরে উপর আশ্রয় নিয়েছে। তাদের অনকেরই প্রয়োজনীয় খাবার নেই; বিশুদ্ধ পানীয় জল নেই। শিশু খাদ্য, গো-খারদ্য ও পয়ঃনিস্কাশনেরও সমস্যা প্র্কট। প্লাবিত এলাকার ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
নড়িয়া পৌরসভার ঢালি পাড়ার পানিবন্দি চানমিয়া বলেন, “আমাদের ঘর হাঁটু পানিতে ডুবে গেছে। খুবই কষ্টে আছি। আমাদের খাবর সংকট। কাজ-কর্ম নেই। আর ২/১ দিন পানি বাড়লে ঘরে থাকতে পারব না।”
জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচরের সোনামদ্দি বলেন, “বন্যার পানিতে আমরা ভেসে যাচ্ছি। ঘরের ‘টুয়া’ পর্যন্ত পানি। গবাদিপশু নিয়ে বিপদে আছি। আমাদের এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জল, শুকনো খাবারের অভাব। পয়ঃনিষ্কাশনের খুবই সমস্যা হচ্ছে।”
জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ শাখার প্রধান সহকারী রাকিব হোসেন বলেন, বন্যা কবলিতদের জন্য ২৯৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা রয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নড়িয়া উপজেলায় ১২০ মেট্রিক টন, জাজিরা উপজেলায় ৩১০ মেট্রিক টন, ভেদরগঞ্জ উপজেলায় ৬০ মেট্রিক টন, শরীয়তপুর সদরে ৮০ মেট্রিক টন জিআর চাল বরাদ্দ করা হয়েছে।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী নির্বাহী কর্মকর্তা জয়ন্তি রুপা রায় বলেন, নড়িয়া পৌরসভার অধিকাংশ এলাকা, মোক্তারের চর, কেদারপুর, ভুমখাড়া, চরআত্রা ও নওপাড়া এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
“সরকার তাদের খাদ্যসহায়তা দেওয়া শুরু করেছে। পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি, খাবার ট্যাবলেটসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে।”
জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, “পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ স্থানীয় চেয়ারম্যানদের মাধ্য চাল বিতরণ শুরু করেছেন।”