মরদেহ সৎকারে বাধা, প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দাহ

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় শ্মশানের জমির মালিকানার বিরোধে একটি লাশ সৎকারে বাধা সরাতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।

নীলফামারী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 June 2020, 08:09 PM
Updated : 18 June 2020, 08:09 PM

বৃহস্পতিবার রণচণ্ডী ইউনিয়নের মধুপাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, ওই গ্রামের সুরেশ বর্মন (৯৫) বার্ধক্যজনিত রোগে বুধবার রাত ১১টায় নিজ বাড়িতে মারা যান। এরপর স্বজনরা স্থানীয় শ্মশানে তার লাশ দাহের জন্য প্রস্তুতি নিলে জমির মালিকানা দাবি করে তাতে বাধা দেয় উত্তরপাড়া গ্রামের মাহাতাব আলীর ছেলে আজাহার আলী, মোহম্মদ আলীর ছেলে জাহাঙ্গীরসহ তাদের পরিবারের লোকজন।

এ সময় বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এলাকাবাসী থানায় অবহিত করে।

পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের হস্তক্ষেপে লাশ দাহ করা হয়।

মৃত সুরেশ বর্মনের ছেলে রুহিদাস চন্দ্র রায় বলেন, তার বাবার লাশ দাহের প্রস্তুতি নিতে গেলে আজাহার আলী ও তাদের লোকজন করোনাভাইরাসে মৃতের গুজব ছড়িয়ে লাশ দাহে বাধা দেয়।

“মরদেহ দাহের জন্য সাজানো জ্বালানির বাঁশ ও কাঠ ছুড়ে ফেলে দেয়। পরে পুলিশ, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতায়র বাবার মরদেহ দাহ করি।”

গ্রামের ইদ্রিস চৌধুরী (৬৫) বলেন, শ্মশানটি শত বছরের পুরনো। তৎকালীন জমিদার শ্মশানের জন্য ১৯ শতক জমি দিয়েছিলেন গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য। শ্মশানের জমির মালিকানা নিয়ে কোনোদিন কারো দাবি ছিল না।

“হঠাৎ করে উত্তরপাড়ার আজাহার আলী ও জাহাঙ্গীরসহ তাদের পরিবারের লোকজন মালিকানা দাবি করছেন।”

তিনি জানান, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সম্প্রতি শ্মশানের উন্নয়ন কাজ করতে গেলে তারা বাধা দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। সেই সময় রুহিদাস চন্দ্র রায় তাদের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আজাহারসহ দুই জন গ্রেপ্তার হন। পরে তারা জমির মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন।

এ ব্যাপারে আজাহার আলী (৪৫) বলেন, “তারা যেটি শ্মশানের জমি দাবি করছেন সেই আমাদের পৈত্রিক সম্পতি। সেটি কখনও শ্মশান ছিল না। তারা জোর করে আমাদের জমিকে দখল করে শ্মশান বানানোর চেষ্টা করছেন। আমরা মরদেহ দাহ করতে বাধা দিয়েছি। তবে চিতা ভাংচুর করিনি; তারা মিথ্যা কথা বলছে।”

রণচণ্ডী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান বলেন, “উত্তরপাড়া গ্রামের আজাহার আলী ও জাহাঙ্গীরের ভুলের কারণে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা সমাধান করা হয়েছে। তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছেন।”

কিশোরগঞ্জ থানার ওসি হারুন অর রশীদ বলেন, “কিছু মানুষের উস্কানিতে একটি পক্ষ না বুঝে লাশ দাহ করতে বাধা দিয়েছিল। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী ওই বৃদ্ধের লাশ দাহের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।”

কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, “যেহেতু শ্মশানের জমি নিয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে, সেহেতু দুপক্ষকে আগের অবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছি। আদালতের রায় যে পক্ষ পাবে সেই পক্ষকে জমি বুঝিয়ে দেওয়া হবে।”