গাজীপুরে পোশাক কারখানার কালো ধোঁয়া লোকালয়ে

গাজীপুর শহরের দক্ষিণ সালনার আবাসিক এলাকায় কলোটেক্স অ্যাপারেল সোয়েটার নামে একটি পোশাক কারখানার বিরুদ্ধে কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পরিবেশ দূষণের অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2020, 11:26 AM
Updated : 3 June 2020, 11:26 AM

কারখানাটিতে কয়লা পুড়িয়ে বয়লার চালানো হয় বলে স্বীকার করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষও। আর জেলার পরিবেশ অধিদপ্তর পরিবেশ দূষণের অভিযোগ পেলেও এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

সালনার বাসিন্দা মো. আলমগীর হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ওই কারখানার কলো ধোঁয় উড়ে এসে পড়ছে পুরো এলাকায়।

“এতে ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে এলাকাবাসীরকে। গাছপালারও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এলাকায় শ্বাসকষ্ট ও চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগবালাই বেড়ে গেছে। কিন্তু বিষয়টি কেউ দেখছে না।”

কারখানাটির উত্তর পাশে বসবাসরত সুফিয়া বেগম নামে এক নারী বলেন, এলাকার অনেকেই কারখনা কর্তৃপক্ষ ও জেলার পরিবেশ দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি।

“ভোর ৫ থেকে ৯টা এবং বেলা ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত আমার ঘরে ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায়। এতে আমার ছেলে-মেয়েসহ সবার শ্বাসকষ্ট হয়।”

ওই এলাকার কৃষক মো. জামির উদ্দিন বলেন, “কয়েক মাস ধরে ওই কারখানার কালো ধোঁয়ার সঙ্গে কণার মত দানা দানা বস্তু আসছে। এতে আমাদের ক্ষেতের ফষলের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। ফলন কমে গেছে।”

ওই এলাকার উদয়ন মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আলতাফ হোসেন তার শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যহানির অভিযোগ করেছেন।

তিনি বলেন, তার স্কুলে প্লে গ্রুপ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তিন শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে।

“স্কুলের পাশেই কলোটেক্স কারখানাটি পরিবেশ দূষণ করছে। শিক্ষার্থীদের শ্বাস-কষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। এ নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও বিষয়টি তারা আমলে নেয়নি। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো সামাধান পাচ্ছি না।”

এ বিষয়ে কারখানার জ্যেষ্ঠ মানবসম্পদ কর্মকর্তা মো. নূরুল আমিন দাবি করেন, গত বছর কারখানাটি চালুর পর থেকে তারা বয়লার বিভাগ ও পরিবেশ দপ্তরের যথাযথ অনুমোদন নিয়েই কারখানায় বয়লার চালাচ্ছেন।

কয়লা ব্যবহার করার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, “ভাল কয়লা হলে কোনো সমস্যা হয় না। তবে কয়লার মান খারাপ হলে কিছু সমস্যা হয়। দূষণ হয়। এতে শ্রমিকদেরও সমস্যা হয়। ফার্নেস অয়েলে খরচ বেশি হলেও শ্রমিকদের সমস্যা আমলে নিয়ে অধিকাংশ সময় ফর্নেস অয়েল দিয়ে বয়লার চলানো হয়। তবে কয়লায় যাতে পরিবেশ দূষণ না হয় সেজন্য চিমনিতে ফিল্টার ব্যবহার করা হয়।”

এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন গাজীপুরের পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুস সালাম সরকার।

তিনি বলেন, “কয়লা দিয়ে বয়লার চালিয়ে পরিবশে দূষন করাটা অন্যায়। কয়লা দিয়ে বয়লার চলানোর কারণে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সমস্যা হচ্ছে এমন অভিযোগ পেয়েছি। সত্যতা মিললে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

কয়লা দিয়ে বয়লার চালানোর আইন আছে কিনা সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি। তবে যেকোনো মাধ্যমে পরিবেশ দূষিত করা শাস্তিযোগ্য বলে তিনি জানিয়েছেন।