ময়মনসিংহে মেডিকেলে সুরক্ষা এখনও ‘অধরা’, রোগী কমে গেছে

‘নভেল করোনাভাইরাস আতঙ্কে’ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কমে গেছে রোগীর সংখ্যা।

ইলিয়াস আহমেদ ময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 March 2020, 10:15 AM
Updated : 26 March 2020, 10:15 AM

১২শ শয্যার এ হাসপাতালে দিনে গড়ে আড়াই থেকে তিন হাজার রোগী চিকিৎসার জন্য ভর্তি থাকে তবে বৃস্পপতিবার তা ৭৭৮ জনে নেমে গেছে বলছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এছাড়াও বর্হিবিভাগে প্রতিদিন হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। সুরক্ষা সামগ্রী না থাকার কারণে চিকিৎসকরা যেমন চিকিৎসা দিতে পারছেন না বলে রোগীও কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা কর্তৃপক্ষর।

বৃহস্পতিবার হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের যথাযথ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) ছাড়াই দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। কভিড–১৯-এর ঝুঁকি মোকাবেলায় সাধারণ কাপড়ের গাউন, একটি মাস্ক আর একজোড়া গ্লাভস পড়েই চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও টিকিট কাউন্টারে কর্তব্যরত অবস্থায় কাউকেই ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়নি। ভেতরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরেও একই চিত্র দেখা গেছে।

৫ নম্বর গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি নূরজাহান বেগম বৃহস্পতিবার বলেন, গত ৩-৪ দিন আগেও ওয়ার্ডে প্রায় শতাধিক সিজারিয়ান রোগী ভর্তি ছিল। আজ ১২-১৫ জন রোগী আছে।

“করোনাভাইরাস আতঙ্কে অনেকেই সুস্থ না হয়েই চলে গেছে। আমারও শরীরের অবস্থা খুব খারাপ, তা না হলে আমিও চলে যেতাম।”

জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালনরত চিকিৎসক জাকির হোসেন বলেন, যতটুকু সম্ভব দূরত্ব ও নিরাপত্তা বজায় রেখে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। যে গাউন পড়ে তাঁরা দায়িত্ব পালন করছেন, সেটিকে কোন অবস্থাতেই পিপিই বলা যাবে না।

বহির্বিভাগে পুরুষ এবং নারী কাউন্টারে দায়িত্বরত কর্মচারীরাও কোনো ধরনের পিপিই পরিহিত ছিলেন না। তাছাড়া তথ্য ও অনুসন্ধান কেন্দ্রেও একই চিত্র। সাধারণ একটি মাস্ক পরেই রোগীদের সেবা দিচ্ছেন তারা।

হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নাজমা আক্তার ও মর্জিনা আক্তার জানান, স্বাভাবিক অবস্থায় ২৪টি বিছানার বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১২০ জন রোগী ভর্তি থাকত। করোনাভাইরাসের আতঙ্কে গত এক সপ্তাহ থেকে রোগী কমতে কমতে ১০-১৫ জন রোগী ভর্তিতে নেমে এসেছে। রোগীরা নিজেরাই ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন বলেও জানান তারা।

হাসপাতালের সিকিউরিটি গার্ড লুৎফর রহমান ও মেহেদী হাসান জানান, আগে রোগীর স্বজন ও দর্শনার্থীদের কোরোভাবেই সামাল দেওয়া যেত না। আর এখন হাসপাতালে দর্শনার্থী আসা বন্ধ হয়ে গেছে।

হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গণপতি আদিত্য বলেন, করোনাভাইরাসের ঝুঁকি থেকে বাঁচার জন্য হাসপাতালের অধ্যাপক থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী সবারই পিপিই পরা জরুরি। কিন্তু এ নিয়ে বারবার তাগাদা দিলেও কর্তৃপক্ষ শুধু আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে। পর্যাপ্ত হারে পিপিই সরবরাহ হচ্ছে না।

এভাবে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলে ভবিষ্যতে তা ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক লক্ষ্মী নারায়ণ মজুমদার বলেন, আতঙ্কে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। তাছাড়া ডাক্তার-নার্সদের চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে চিকিৎসা দিতে পারছে না।

“স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে মাত্র ১২০ পিস পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে; যা খুবই অপ্রতুল।

“এগুলো আবার একবার ব্যবহারযোগ্য। তাই গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে সেগুলো বিভিন্ন ওয়ার্ডে সরবরাহ করা হচ্ছে।”

আরও দুই হাজার পিপিই-র জন্য আবেদন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যেতে বলছে, দেখা যাক কতগুলো দেয়।

চাহিদা অনুযায়ী আপনাদের কতগুলো পিপিই দরকার এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “চাহিদা তো অনেক তবে, সেটা রোগীর উপর নির্ভর করবে।”

করোনাভাইরাস সনাক্তকরণ মেশিন বা কিট আপনাদের এখানে সর্বরাহ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, ঢাকা থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাসপাতাল পরিদর্শন করে গেছেন। চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। এখন চলছে ল্যাব তৈরির কাজ। সেটি সম্পূর্ণ হলেই করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ মেশিন বা কিট সরবরাহ করা হবে বলেও জানান তিনি।