জেলার কামারখন্দ উপজেলায় ১৯টি দুর্যোগ-সহনীয় ঘর ও দুটি গুচ্ছগ্রাম বাস্তবায়নে এই অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা বলছেন, প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে তাদেরই প্রকল্পগুলো পরিচালনা করার কথা। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহাঙ্গীর আলম চেয়ারম্যানদের এড়িয়ে তিনি নিজেই সব কাজ করেন।
এ কারণে প্রকল্পগুলো শেষ হচ্ছে না এবং নতুন প্রকল্পও শুরু করা যাচ্ছে না বলে তাদের অভিযোগ।
চৌবাড়ি গুচ্ছগ্রাম-২ প্রকল্পের সভাপতি রায়দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বলেন, “আমি এই গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের সভাপতি। কিন্তু কাজের বিষয়ে আমার কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। ইউএনওর নির্দেশে বরাদ্দ টাকার চেক অগ্রিম স্বাক্ষর করে জমা দিয়েছি।”
অন্য চেয়ারম্যানরা নাম না জানিয়ে বলেন, তারা ইউএনওর নির্দেশ উপেক্ষা করতে পারেন না।
ইউএনও জাহাঙ্গীর আলম প্রথমে অগ্রিম চেক নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেছিলেন, “কাজের সুবিধার জন্য এটা করা হয়েছে।”
কিন্তু পরে তিনি চেক নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এদিকে নির্মাণকাজ অসমাপ্ত রেখেই গত ৬ ফেব্রুয়ারি চৌবাড়ি গুচ্ছগ্রাম-২ প্রকল্পে ১০টি ঘরের উদ্বোধন ও ভূমিহীনদের মাঝে চাবি হস্তান্তর করা হয়েছে।
সুবিধাভোগীদের অভিযোগ, এসব ঘর বালুর ওপর কোনোমতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ঘরের ভেতর আসবাবপত্র রাখার মত কোনো পরিবেশ নেই।
এ বিষয়ে ইউএনও জাহাঙ্গীর বলেন, “উদ্বোধন করা গুচ্ছগ্রাম বসবাসের জন্য উপযোগী না হলেও বাসিন্দারা এলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।”
এছাড়া গুচ্ছগ্রাম-১ প্রকল্পটির নির্মাণকাজ এখনও শুরু হয়নি।
এসব বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, “ইউএনও স্যারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম প্রকল্পগুলো কিভাবে শেষ করব। তখন ইউএনও স্যার বলেছিলেন, ‘এ বিষয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না।’ প্রকল্পের যাচাই-বাছাইয়ের জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দায়িত্ব দিয়েছেন ইউএনও স্যার।”
আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, “ইউএনও নিজেই সুবিধাভোগী নির্বাচনসহ প্রকল্পের কাজ করেন। এ কারণে জনপ্রতিনিধিরা নতুন কোনো প্রকল্পের সভাপতি হতে চাচ্ছেন না। গত নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২৯টি ঘর নির্মাণে নতুন প্রকল্পের বরাদ্দ পেলেও তা এখনও শুরু করা সম্ভব হয়নি।”
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপ-সহকারী সাইদুল ইসলাম বলেন, “ইউএনওর নির্দেশেই প্রকল্পের বরাদ্দের চেক স্বাক্ষর করে জনপ্রতিনিধিরা জমা দিয়েছেন। পরে ইউএনওর নির্দেশমতো তা খরচ করা হয়েছে।”
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সহকারী নাসির শেখ বলেন, “প্রকল্পের প্রায় ৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা এখনও ইউএনও স্যারের কাছে জমা আছে। এদিকে ছয় মাস অতিবাহিত হলেও বাকিতে কেনা ইটের দাম, রাজমিস্ত্রি ও রং মিস্ত্রির মুজুরিসহ বিভিন্ন জিনিসের মূল্য এখনও পরিশোধ করা হয়নি।”
ইউএনও জাহাঙ্গীর আলম এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, “প্রকল্প কর্মকর্তা নিয়মিত অফিস করেন না। এ কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে ঝামেলা হচ্ছে।”
এ বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, “কামারখন্দ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আমার কাছে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন যে, ইউএনও প্রকল্পের টাকা নিজ হেফাজতে রেখে সবকিছু মেইনটেন করছেন। কাজের সাথে জড়িত কিছু লোকজন বাকি টাকার জন্য ঝামেলা করছেন।”