নীলফামারীতে বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ, স্থবির জনজীবন

উত্তরের জেলা নীলফামারীর ওপর দিয়ে শৈত্যপবাহ বয়ে যাচ্ছে। হিমল বাতাস আর শীতের তীব্রতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।

নীলফামারী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2020, 09:39 AM
Updated : 21 Jan 2020, 09:47 AM

মঙ্গলবার সকাল থেকে আকাশ ঘন কুয়াশার ঢাকা ছিল; দুপুর ১টা পর্যন্ত দেখা মেলিনি সূর্যের। বেলা পর্যন্ত সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে ভারী ও মাঝারী যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।

মাঘ মাসের শুরুর দিন থেকেই এ জেলায় তীব্র শীত অনূভুত হতে শুরু করে। গত শনিবার থেকে ঘন কুয়াশা আর কনকনে বাতাসে শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে।

সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া দপ্তরের আবহাওয়া সহকারী লোকমান হাকিম বলেন, “মঙ্গলবার সকাল ৬টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।”

তিনি বলেন, “তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসায় বর্তমানে জেলার উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ২৬ জানুয়ারি থেকে তাপমাত্রা  আরও  কমে ৬ থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসতে পারে।”

টানা কয়েক দিন বিরতি থাকার পর গত শনিবার থেকে জেলায় তাপমাত্রা কমতে থাকে।এ নি জেলাজুড়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়। রোববার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

এদিকে টানা তিনদিন থেকে বয়ে যাওয়া হিমশীতল বাতাস আর ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জেলার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না মানুষ। অধিকাংশ সময় জনশুন্য থাকছে শহরের রাস্তাঘাট। তীব্র শীতে ঘর থেকে বের হতে না পারায় চমর বেকায়দায় পড়েছে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ।

নীলফামারী পৌর শহরের থানাপাড়া মহল্লার রিকশাচালক দুলাল হোসেন বলেন,“অন্যান্য দিন সকাল ৮টার মধ্যে রিকশা নিয়ে শহরে বের হই। কিন্তু প্রচণ্ড শীত পড়ায় এখন সকাল ১০টার পর বের হতে হচ্ছে।

“আজ সকাল ১০টায় রিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছি, এখন বেলা একটা বাজে মাত্র ৫০ টাকা আয় হয়েছে।”

শহরের বাবুপাড়া এলাকার রিপন রায় বলেন,“গত শনিবার থেকে প্রচণ্ড শীত অনুভূত হচ্ছে। দিনের বেলায় মাঝে মধ্যে সূর্যের তাপ ছড়ানোর কারণে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও সন্ধ্যার পর থেকে বেশি শীত অনুভূত হয়। প্রচণ্ড শীতে হাত-পা বরফের মতো ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।”

জেলা সদরের ইটাখোরা ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষি শ্রমিক নজরুল ইসলাম (৬০) বলেন, “মাঘ মাসের জাঁরোত বাঘ কান্দে বাহে। মাঘ মাস যে দিন থেকে পড়িছে ওই দিন থেকি হামার কাঁপানি শুরু হইছে। হাত পা শিক নাগি যাইছে। সকাল বেলাও সূর্য দেখা পাওয়া যাইছেনা। শির শির বাতাসত মাঠোত কাম করির পাওছো না।’

ডিমলা উপজেলা শহরের জাহিদুল ইসলাম বলেন, “শীতের তীব্রতা অনেক বেশি অনুভুত হচ্ছে। হিমশীতল বাতাসের কারণে কাঁপুনি শুরু হয়েছে। ভারী গরম কাপড় শরীরে থাকার পরেও শীত নিবারণ কষ্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

নীলফামারী জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা এস এ হায়াত বলেন, এবারের শীতে জেলায় সরকারিভাবে ৫৫ হাজার পিস কম্বল, তিন হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং শীতবস্ত্র ক্রয়ের জন্য নগদ ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

“মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলার ছয় উপজেলায় ৫২ হাজার কম্বল ও  দুই হাজার ৫৭৫ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।”

এছাড়া আরও শীতবস্ত্র ক্রয় করে তা বিতরণের জন্য নগদ ১২ লাখ টাকা সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।