আম বয়ানে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু

আম বয়ানের মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুরু হয়েছে তাবলিগ জামাতের ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আনুষ্ঠানিকতা।

আবুল হোসেন গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2020, 04:47 AM
Updated : 17 Jan 2020, 04:47 AM

শুক্রবার ফজরের নামাজের পর ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়। রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিশ্ব সম্মিলন শেষ হবে।

দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা এবার দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন। আর মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা গত ১০ থেকে ১২ জানুয়ারি প্রথম পর্বের ইজতেমায় অংশ নেন।

দ্বিতীয় পর্বের সমন্বয়ক হাজী মুনির হোসেন জানান, গত সোমবার মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীদের কাছ থেকে মাঠ বুঝে পাওয়ার পর থেকেই দ্বিতীয় পর্বের প্রস্তুতি শুরু হয়। বুধবার থেকেই দেশ-বিদেশ থেকে লোকজন ইজতেমা ময়দানে জড়ো হতে শুরু করেন।

বৃহস্পতিবার মাগরিবের পর প্রাক বয়ান করেন ভারতের মাওলানা শামীম। তা বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা জিয়া বিন কাসেম।

এরপর শুক্রবার ফজরের পর মদিনার এক মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ওসমান শুরু করেন আম বয়ান। তা বাংলায় তরজমা করে শোনান মাওলানা আব্দুল্লাহ মুনসুর।

বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আমির ইঞ্জিনিয়ার ওয়াসেফুল ইসলাম জানান, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায়’ ভারতের নিজামুদ্দিন মারকাজের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভি এবারও ইজতেমায় আসছেন না।

তবে নিজামুদ্দিন মারকাজের পক্ষ থেকে ৩২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে ইজতেমায় এসে পৌঁছেছেন। তাদের তত্ত্বাবধানেই পরিচালিত হচ্ছে এবারের ইজতেমা।

সাদ কান্ধলভির নেতৃত্ব নিয়ে বিভক্তির জেরেই দুই বছর ধরে আলাদাভাবে ইজতেমা করে আসছে তাবলিগ জামাতের দুই অংশের অনুসারীরা।

বাংলাদেশের ৬৪ জেলা থেকে আসা মানুষের পাশাপাশি সৌদি আরব, পাকিস্তান, ভারত, ইরাক, তুরস্ক এবং আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা এবারের ইজতেমায় এসেছেন। ইজতেমা মাঠের নির্ধারিত খিত্তায় তাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে বলে জানান তাবলিগ জামাতের মুরুব্বি মো. রফিকুল ইসলাম।

শুক্রবার দুপুরে এই এইজতেমা মাঠেই হবে জুমার নামাজে দেশের সর্ববৃহৎ জামাত। বাংলাদেশের মাওলানা মোশারফ হোসেনের ইমামতিতে কয়েক লাখ মানুষ এই জামাতে নামাজ পড়বেন।

রাজধানী ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন উপজেলা এবং আশপাশের জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ এ নামাজে যোগ দিতে আসবেন।

ইজতেমায় আসা মানুষের নিরাপত্তায় পুরো ময়দান ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে ৫ স্তরের নিরাপত্তা বলয়। সিসিটিভি ও ওয়াচ টাওয়ার দিয়ে নজরদারি করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় রাখা হয়েছে বাড়তি পুলিশ সদস্য।

গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন ঘটতে না পারে সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়ে আট হাজার সদস্য নিয়োজিত রয়েছে এই কাজে।

ইজতেমায় আসা মানুষের জরুরি চিকিৎসার জন্য জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, টঙ্গী সরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান ইজতেমা ময়দানের উত্তর পাশে নিউ মন্নু কটন মিলের ভেতরে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পের ব্যবস্থা করেছে।

পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন, বর্জ্য অপসারণসহ অন্যান্য কাজের দেখভাল করছে সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসনসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থা।

বরাবরের মতই বাংলাদেশ রেলওয়ে ও বিআরটিসি ইজতেমার তিন দিন বিশেষ ট্রেন ও বাসের ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া রোববার আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত ঢাকামুখী সব ট্রেন টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনে পাঁচ মিনিট বিরতি দেবে।

গাজীপুরের জেলা তথ্য অফিসার মো. জালাল উদ্দিন জানান, ইজতেমায় আসা সবার সুবিধার জন্য রোববার সকাল ৬টা থেকে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। কালীগঞ্জ-টঙ্গী মহাসড়কের মাজুখান ব্রিজ থেকে স্টেশনরোড ওভারব্রিজ পর্যন্ত এবং কামারপাড়া ব্রিজ থেকে মুন্নু টেক্সটাইল মিল গেইট পর্যন্ত সড়কে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারবে না।