স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার স্বেচ্ছাচারিতায় হুমকিতে পদ্মা নদীর বাঁধ

অবৈধভাবে বালু তোলায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানার পরও রাজশাহী নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে বালু তোলা অব্যাহত রেখেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বদরুল হাসান লিটন রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2020, 04:15 PM
Updated : 15 Jan 2020, 04:59 PM

বুধবার বিকালে পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নে পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে আগের জায়গা থেকেই চারটি খননযন্ত্র দিয়ে আবার বালু তুলতে সরেজমিনে দেখা গেছে।

এতে রাজশাহী শহরে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক রক্ষা বাঁধের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

এর আগের দিন মঙ্গলবার বিকালে পবা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবুল হায়াত ওই বালুমহালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন নগরের বুলনপুর এলাকার বাসিন্দা এই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে।

সেই সঙ্গে ওই এলাকা থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করারও নির্দেশ দেন তিনি।

নির্দেশ অমান্য করে ফের বালু তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবুল হায়াত বলেন, “শর্ত ভেঙে আবার বালু উত্তোলন করার কথা আমিও শুনেছি।

“পবায় কৃষি জমিতে পুকুর খনন বন্ধের এক অভিযান চালানোর কারণে বুধবার বালুমহালে যেতে পারিনি। তবে সেখানেও অভিযান চালানো হবে।”

রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হক জানান, আনোয়ার পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের মদনপুর, কসবা ও চারহরিপুর মৌজার বালুমহাল ইজারা নেন।

তিনি বলেন, ইজারার নিয়ম অনুযায়ী নদীর তীর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে গিয়ে বালু উত্তোলন করার শর্তে বালুমহাল এই ইজারা দেওয়া হয়। অথচ আনোয়ার হোসেন নদীরের তীরের এক কিলোমিটারের ভেতরেই বালু উত্তোলন করছেন।

এর আগে নিয়ম ভেঙে সোনাইকান্দি এলাকায় বালু তোলায় নব নির্মিত পদ্মা তীররক্ষা বাঁধের দুইটি স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ‘বালু উত্তোলন বন্ধ করতে’ পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু নিয়মের তোয়াক্কা না করে এরপরও সেখানে বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখেন এ বালুকারবারী।

উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সাইদুর রহমান বাদল বলেন, “ভ্রাম্যমাণ আদালতের কর্মকর্তারা চলে আসার পর মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকেই আনোয়ার হোসেন সোনাইকান্দি এলাকায় পদ্মার তীর রক্ষা নতুন বাঁধে নিজে উপস্থিত থেকে বালু উত্তোলন শুরু করেন।

হরিপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মাহফুজ আলী জানান, তার ওয়ার্ডের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতদিন ধরে একই জায়গা থেকে বালু তোলা চলছে।

এভাবে নদীর পাড়ের এত কাছে থেকে বালু তোলা হলে এলাকার ভাঙনের হুমকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

“গত মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে বালু তোলা বন্ধ করে দেওয়া হলেও খননযন্ত্রগুলোর যেখানে ছিল সেখানেই রেখে দেওয়া হয়। ওই জায়গা থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়া হলে খনন যন্ত্রগুলো কেন তুলে নেওয়া হলো না?

“যন্ত্র না তোলা পর্যন্ত তাদের কাজ বন্ধ করা যাবে না। প্রশাসনকে এই বিষয়টি বুঝতে হবে।” 

এদিকে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফের বালু তোলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজশাহী পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা মাহফুজুর রহমান।

তিনি বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত জায়গা থেকে বালু উত্তোলন করুক এ ব্যাপারে তাদের কোনো আপত্তি নেই।

তবে যেখান থেকে বালু তোলা হচ্ছে তাতে রাজশাহী শহররক্ষা বাঁধের ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।