রোববার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় কুড়িগ্রামের রাজারহাটে নয় দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস।দেশের উত্তরাঞ্চলে মৌসুমের চতুর্থ দফার শৈত্যপ্রবাহ বইতে শুরু করেছে।
তাপমাত্রা দশ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে আলু চাষের জন্য শঙ্কার। এ জেলায় সূরয দেখা গেলেও ততটা উষ্ণতা ছড়াতে দেখা যায়নি।
তবে রোববার কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক ড. মোস্তাফিজার রহমান প্রধান বলেন, টানা শীতের কারণে কিছু কিছু এলাকায় বোরো ও আলু ক্ষেতের কিছুটা ক্ষতি হলেও দিনে রোদের কারণে ক্ষতিটা পুষিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে।
অন্যদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘শৈত প্রবাহের জন্য বিশেষ কৃষি আবহাওয়া পরামর্শে’ বলা হয়েছে, শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত হাল্কা কুয়াশা থাকলে আলুর ‘নাবী ধ্বসা’ রোগ হতে পারে।
গত মঙ্গলবার প্রকাশিত এ পরামর্শে বলা হয়েছে-এজন্য নিয়মিত আলুর ক্ষেতের দেখাশোনা করার পাশাপাশি রোগ দেখা দিলে অনুমোদিত বালাই নাশক দিতে হবে।
এছাড়া কচুরিপানা ও খড়ের মত জিনিস দিয়ে আলুর জমিতে ‘মালচিং’ এর ব্যবস্থা করতেও পরামর্শ দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
কৃষিবিদ ড. মোস্তাফিজার রহমান জানান, এ বছর কুড়িগ্রামে এক লাখ ১১ হাজার ৫৬ হেক্টর জমিতে চার লাখ ৩২ হাজার ৩২ মে. টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে।
তবে পাঁচ হাজার ৬৮৮ হেক্টর জমিতে আলুর বীজতলা করার সরকারি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এখন পর্যন্ত ছয় হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে বীজতলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আলু চাষে তাপমাত্রা ও আলোর খুবই প্রভাব ফেলে। ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস গড় তাপমাত্রা আলু চাষের জন্য খুবই উপযোগী।
সরকারি কৃষি তথ্য সার্ভিস এআইএস জানাচ্ছে- ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রায় আলু গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। আবার ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার ওপরে গেলে ফলন কমতে থাকে, ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আলু উৎপাদন ক্ষমতা লোপ পায়।
আলু লাগানোর সময় তাপমাত্রা ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকার দিকে লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দিয়েছে এআইএস।
এ তাপমাত্রায় আলু গাছ দ্রুত গজায় বলছেন তারা।
বাংলাদেশে মেঘমুক্ত আকাশ ও তাপমাত্রা সঠিক থাকলে অন্য বছরের তুলনায় আলুর গড় ফলন ১৫% পর্যন্ত বেশি হতে দেখা গেছে।
আলু ছাড়াও এ কুড়িগ্রাম জেলায় এবার বোরো ধানের চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসেবে চলতি বছর জেলায় পাঁচ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের বীজতলা লাগানোর লক্ষ্য ঠিক করা হলেও পাঁচ হাজার ৯৯৪ হেক্টর জমিতে এরই মধ্যে বীজতলা তৈরি করেছে কৃষকরা।
এদিকে, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রোববার মধ্যরাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে, তা দেশের কোথাও কোথাও বিকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থেকে মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। অর্থাৎ বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, আরো কয়েকদিন আবহাওয়া এমন থাকবে।
অন্যদিকে টানা শীতের কারণে হাসপাতালগুলোতে শিশু ও বয়স্ক রোগীদের ভিড় বেড়ে গেছে।
অন্যদিকে, কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার পুলক কুমার সরকার জানান, রোববার তাদের হাসাপাতলে ভর্তি হওয়া ৩৭ জন ডায়েরিয়া রোগীর মধ্যে ৩৬ জনই শিশু।
শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ জন শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে বলেও জানান তিনি।