পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে ভিসির ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য এম রোস্তম আলীর বিরুদ্ধে প্রভাষক নিয়োগে এক প্রার্থী থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, যিনি শেষ পর্যন্ত নিয়োগ পাননি।

সৈকত আফরোজ আসাদ পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2019, 06:20 PM
Updated : 24 Oct 2019, 06:20 PM

তবে উপাচার্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ প্রার্থী মনিরুল ইসলাম এই অভিযোগ করেন।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জানা যায়, ইতিহাস বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ অক্টোবর সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ২৮ জন নিয়োগ প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন।

লিখিত পরীক্ষা শেষে শিবু চন্দ্র অধিকারী, শরিফুল ইসলাম, তানভীর আহমেদ, রাজীবুল ইসলাম, সালাহউদ্দিন ও নুরুল হামিদ নামের ছয়জনকে উত্তীর্ণ ঘোষণা করে তালিকা প্রকাশ করা হয়।

নিয়োগ প্রার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ মনিরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, সকল শর্ত পূরণ সাপেক্ষে আবেদন করেন মনিরুল। চলতি বছরের জুন মাসে কর্তৃপক্ষ নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করলে পরিচিত এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তার।

মনিরুলের অভিযোগ, দুদফা সাক্ষাতের পর উপাচার্য শিক্ষক হিসেবে মনিরুলকে নিয়োগ দিতে ১২ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। সেই মতে নিয়োগ পরীক্ষার আগে জমি বিক্রি করে উপাচার্যকে ঢাকার ফার্মগেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেস্ট হাউজে গিয়ে দুদফায় প্রথমে পাঁচ ও পরে তিন মিলে মোট আট লাখ টাকা দেন।

“নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগের দিনও মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় নিয়োগের আশ্বাস দিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে বলেন ভিসি।”

মনিরুল অভিযোগ করেন, নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়েই পূর্ব নির্ধারিত কয়েকজন প্রার্থীর পরীক্ষায় বিশেষ সুবিধা প্রাপ্তি ও গতিবিধি দেখে সন্দেহ হয়। পরে ফলাফল তালিকাতেও তাদের নাম প্রকাশ করা হয়।

“এ সময় ভিসি স্যারকে ফোন দিয়ে আমাকে নিয়োগ না দেওয়ায় তাকে দেওয়া টাকা ফেরত চাই। তখন স্যার ডিজিএফআই ও র‌্যাব দিয়ে আমাকে গ্রেপ্তার করে শায়েস্তা করার হুমকি দেন।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া একাধিক প্রার্থীর অভিযোগ, উপাচার্য রোস্তম আলী, উপউপাচার্য আনোয়ারুল ইসলাম, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ও ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম নির্দিষ্ট প্রার্থীদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ নিয়ে চুক্তি করেন। সে নিজেদের ঘনিষ্ঠ শিক্ষকদের নিয়ে নিয়োগ পরীক্ষার বোর্ড সাজিয়ে পূর্বনির্ধারিত প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখান।

এ বিষয়ে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য এবং কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হাবিবুল্লাহ বলেন, নিয়োগ বোর্ড নীতিমালা মেনেই সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। লিখিত পরীক্ষায় ফলাফলে ছয়জনকে উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হলেও মৌখিক পরীক্ষায় বোর্ড সন্তুষ্ট না হওয়ায় কাউকেই চুড়ান্ত উত্তীর্ণ ঘোষণা করেনি।

অভিযোগের বিষয়ে পাবিপ্রবি উপ-উপাচার্য আনোয়ারুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে ঘুষ গ্রহণ ও নিয়োগ পরীক্ষায় অস্বচ্ছতার সকল অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে উপাচার্য রোস্তম আলী বলেন, নিয়োগ পরীক্ষায় ফেল করে কতিপয় প্রার্থী নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে।

মনিরুলের সাথে নিয়োগ পরীক্ষার আগে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কথপোকথন ও সাক্ষাতের কথা স্বীকার করলেও আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেন।

নিয়োগ পরীক্ষার প্রার্থীর সাথে বার বার কেন দেখা করেছেন জানতে চাইলে ভিসি বলেন, “মনিরুল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সুপারিশ জানাতে আমার সাথে দেখা করেছিল।”