ত্যাগীরা কোণঠাসা হলে আ. লীগ টিকবে না: কাদের

ত্যাগী নেতারা কোণঠাসা হয়ে গেলে আওয়ামী লীগ টিকতে পারবে না বলে মনে করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2019, 01:17 PM
Updated : 13 Oct 2019, 01:20 PM

রোববার রাজশাহীতে দলের এক সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এ মন্তব্য করেন।

আওয়ামী লীগে নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিয়ে দলের্‌ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “ঘরের মধ্যে ঘর করবেন না। মশারির মধ্যে মশারি খাটাবেন না। দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাকর্মীদের কোণঠাসা করে আওয়ামী লীগ টিকে থাকতে পারে না।

“আজকে বসন্তের কোকিলরা যদি দলের নেতৃত্ব নেয়, তারা যদি প্রাধান্য পায়, আবারও দুঃসময় আসতে পারে। আবারও দুর্যোগ আসতে পারে। আবারও অমানিশা আসতে পারে। সে সময় হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়েও এই সুবিধাবাদী অপকর্মকারীদের খুঁজে পাওয়া যাবে না।”

তিনি বলেন, “খারাপ লোকের আমাদের দরকার নেই। ক্লিন ইমেজের পার্টি দরকার, আগামী জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে আমরা আমাদের দলকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মডেলে ঢেলে সাজাতে চাই। আমরা ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব গড়ে তুলতে চাই সারাদেশে। খারাপ ইমেজের লোক, যাদের ভাবমূর্তি নেই, এই সব লোকদের দলে টেনে পাল্লা ভারী করে কোনো লাভ নেই। দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো। আমার দুষ্ট গরুর দরকার নেই।”

রাজনীতিতে স্থায়ী বলে কিছু নেই এবং শেখ হাসিনা ছাড়া কারও পদই পার্মানেন্ট না উল্লেখ করে কাদের বলেন, কোনো পদ কারো কাছে লিজ দেওয়া হয়নি।

চলমান অভিযান বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সন্ত্রাসীরা সাবধান! ভূমি দখলকারীরা সাবধান! জুয়াড়িরা সাবধান! টেন্ডারবাজরা সাবধান! চাঁদাবাজরা সাবধান! মাদক ব্যবসায়ীরা সাবধান!

“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। এই অ্যাকশনের টার্গেট থেকে কোনো অপকর্মকারী রেহাই পাবে না। মাদকবাজ, ভূমিদস্যু, টেন্ডারবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও জুয়াড়িরা কেউ ছাড় পাবেন না।”

এ সময় কাদের বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রতিক বক্তব্যের সমালোচনাও করেন।

“আজকে বড় বড় কথা বলেন মির্জা ফখরুল সাহেব। বুকে হাত দিয়ে বলুন- হাওয়া ভবন, খাওয়া ভবন, লুটেরা ভবন, সারা বাংলাদেশকে লুট করেছেন। খুনে খুনে বাংলাদেশ রক্তনদী হয়ে গেছে। লাশে লাশে বাংলাদেশ লাশের পাহাড় হয়ে গেছে। বিচার কি হয়েছে? শাস্তি কি কেউ পেয়েছে? আজকে বড় বড় কথা বলেন! গলাবাজি করেন!”

ক্যাসিনো প্রসঙ্গে সেতুমন্ত্রী বলেন, “আজকে ক্যাসিনোর কথা বলেন, গডফাদারের কথা বলেন। এসবের সৃষ্টি কারা করেছে? বঙ্গবন্ধু মদ, জুয়া আইন করে বন্ধ করেছিলেন। জিয়াউর রহমান সেটা চালু করেছেন। এ জুয়ার স্রষ্টা হচ্ছেন আপনারা। ড্রাগের দিকে এ দেশের তরুণদেরকে ঠেলে দিয়েছেন আপনারা। বড় বড় কথা বলেন কোন মুখে!”

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আরেকটি মন্তব্যেরও সমালোচনা করে কাদের বলেন, “ফখরুল সাহেব বলেন, সরকার আজকে খাদের কিনারে। আমি বলতে চাই, যে দলকে জেল, জুলুম নির্যাতন করে আপনারা নিঃশেষ করতে পারেননি, যে দল বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে মিশে আছে সেই দল কোনোদিন খাদের কিনারে যাবে না। বিএনপিই আজকে গভীর খাদের কিনারে। আন্দোলনে ব্যর্থ, নির্বাচনে ব্যর্থ, সবকিছুতেই ব্যর্থ।”

আগামী জাতীয় কাউন্সিলের আগেই সকল মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন করার তাগিদ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় কাউন্সিলের আগেই তৃণমূলের মেয়াদোত্তীর্ণ সকল কমিটি করতে হবে। এ নিয়ে কারও গাফিলতি সহ্য করা হবে না।

দুপুরে রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ওবায়দুল কাদের।

সভায় জাতীয় সম্মেলনের আগে সব মেয়াদ উত্তীর্ণ ইউনিটের কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন, ইউনিট কমিটি গঠন ও দ্বন্দ্ব নিরসনে কেন্দ্রীয় কমিটি আয়োজিত এ প্রতিনিধি সভায় রাজশাহী বিভাগের সকল জেলা, নগর ও উপজেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা অংশ নেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে সভায় প্রতিটি জেলা থেকে একজন করে বক্তব্য রাখেন। সভায় তৃণমূলের নেতারা তাদের বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন। আর দ্বন্দ্ব নিরসন করে জাতীয় সম্মেলনের আগেই সব ইউনিট কমিটি করার কথা বলেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, খাদ্যমন্ত্রী সাধনচন্দ্র মজুমদার, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইয়েদ আহমেদ পলক উপস্থিত ছিলেন।