নারায়ণগঞ্জে ২ মেয়েসহ গৃহবধূকে গলাকেটে হত্যা, গ্রেপ্তার ১

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে এক গৃহবধূ ও তার দুই মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Sept 2019, 06:47 AM
Updated : 19 Sept 2019, 03:30 PM

নারায়ণগঞ্জে দুই মেয়েসহ এক গৃহবধূকে গলাকেটে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় অপর এক শিশুকে জখম করা হয়।

বৃহস্পতিবার সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের সিআই খোলা এলাকায় আনোয়ার হোসেনের সাত তলা বাড়ির ৬ষ্ঠ তলার একটি ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন সিআই খোলার সুমন মিয়ার স্ত্রী নাজনীন আক্তার (২৮), তাদের দুই মেয়ে নুসরাত (৮) ও খাদিজা (২)।

আহত সুমাইয়া (১৫) হলেন নাজনীনের বড়বোনের মেয়ে এবং বাক প্রতিবিন্ধী। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে নিহত নাজনীনের বড়বোনের স্বামী আব্বাস উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ির দাড়োয়ান কবির হোসেন, নাজনীনের স্বামী সুমন ও বড় বোন জেসমিন আকতারকে থানায় নেওয়া হয়েছে।

সিআইডি ও পিবিআই ঘটনাস্থলের আলামত সংগ্রহ করেছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ছুরি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

নারায়ণগঞ্জের জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের বলেন, “পারিবারিক কলহের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। নিহত নাজনীনের ভগ্নিপতি আব্বাস তার স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়ার জের ধরে এ খুন করেছে। আহত সুমাইয়া সন্দেহভাজন প্রধান খুনি আব্বাসের নিজের মেয়ে।”

বিকাল ৩টায় পুলিশ লাশ উদ্ধার করে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য।

থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় জেসমিন আকতার বলেন, গত মঙ্গলবার রাতে তার স্বামী আব্বাসের সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। এরপর তিনি তার প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে বোনের এ বাসায় চলে আসেন। তিনি আদমজী ইপিজেডের একটি গার্মেন্ট কারখানায় কাজ করেন। বৃহস্পতিবার সকালে তার বোন নিহত নাজনীন তাকে রান্না করে খাওয়ান। এরপর সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তিনি এ বাসা থেকে বের হয়ে কাজে চলে যান।

তিনি জানান, সকাল ১০টার দিকে ঘটনার খবর পেয়ে তিনি বাসায় এসে দেখেন তার বোন নাজনীন, বোনের মেয়ে নুসরাত ও খাদিজার রক্তাক্ত লাশ মেঝেতে পড়ে আছে। আর নিজের মেয়ে সুমাইয়া আহত অবস্থায় আছে।

“মেয়েকে ঘটনার কথা জিজ্ঞেস করলে সে জানায় তার বাবা (আব্বাস) ছুরি দিয়ে তাদেরকে হত্যা করেছে। সে বাধা দিলে তাকেও তার বাবা ছুরিকাঘাত করে।”

জেসমিন আরও আরও বলেন, তার সঙ্গে স্বামী আব্বাসের ঝগড়ার জের ধরে আব্বাই এ খুন করেছেন।

নিহত নাজনীনের স্বামী সুমন বলেন, তিনি ডিউটি শেষে কাঁচা বাজার করে সকাল পৌনে ১০টার দিকে বাসায় এসে দেখেন দরজা খোলা। ভিতরে ঢুকেই দেখেন তার স্ত্রী ও সন্তানদের গলাকাটা লাশ মেঝেতে পড়ে আছে।

এ সময় তিনি চিৎকার আর আহাজারি করতে থাকলে পাশের ফ্ল্যাটের লোকজন ছুটে আসেন। এরপর খবর প্রথমে থানা পুলিশ এসে ঘটনাস্থলের আলামত সুরক্ষার জন্য বাড়ির নিচতলা থেকেই প্রধান ফটক তালাবন্ধ করে দেয়। এরপর একে একে পিবিআই ও সিআইডর ক্রাইমসিন ইউনিট এসে আলামত সংগ্রহ করে।

বেলা আড়াইটার দিকে পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের ঘটনা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য দেন।

এসপি হারুন অর রশীদ সন্ধ্যায় পুলিশ লাইন্সে সাংবাদিকদের বলেন, “গ্রেপ্তার ভগ্নিপতি আব্বাসই শ্যালিকা ও তার দুই মেয়েকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে। তার আপন বাক প্রতিবন্ধী মেয়েকেও রক্তাক্ত জখম করেছে।

“জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তার শ্যালক তাকে চড় মেরেছিল এবং প্রায়ই তার স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে শ্যালিকার (নাজমীনের) বাড়ি চলে আসত-এই কারণে সে ধারালো ছুরি দিয়ে তাদেরকে হত্যা করেছে।”

এসপি আরও জানান, আব্বাস ইয়াবা আসক্ত। তার বাড়ি একই এলাকায়। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে আরও তথ্যের জন্য রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে।