উত্তরের যাত্রীদের টাঙ্গাইল পার হতেই রাত কাবার

ঈদের আগের দিনও উত্তরের পথের যাত্রীদের টাঙ্গাইল পার হতেই রাত কেটে গেছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে টাঙ্গাইল অংশে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার এলাকায় কখনও জট, কখনও থেমে থেমে চলছে সব গাড়ি।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধিএম এ রাজ্জাক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 August 2019, 07:25 AM
Updated : 11 August 2019, 07:47 AM

বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমে সিরাজগঞ্জ প্রান্তে সড়কের ধারণক্ষমতার চেয়ে গাড়ি বেশি হওয়ায় ধীরগতি, ঈদ উপলক্ষে প্রচুর পুরনো গাড়ি রাস্তায় নামায় সেগুলো বিকল হয়ে এবং সড়কে খানাখন্দের কারণে যাত্রীদের এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য।

রোববার সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের পাকুল্লা, বাঔখোলা, করটিয়া বাইপাস, নগর জালফৈই, রাবনা বাইপাস ও এলেঙ্গা এলাকায় যানজট রয়েছে। অনেকক্ষণ পরপর কিছুটা আগাচ্ছে, আবার থমকে যাচ্ছে।

ঢাকা থেকে রংপুরগামী চাদনী পরিবহনের যাত্রী আখী বেগম বলেন, তিনি শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় বাচ্চা নিয়ে স্বামীর সঙ্গে বের হয়েছেন গাজীপুর থেকে।

“সকাল ৯টায়ও এলেঙ্গা বসে আছি। সারারাত আমার ছেলেটা কান্নাকাটি করছে। গরমে খুব কষ্ট হচ্ছে ওর। তাই সকালে রাস্তার পাশের পুকুরে গোসল করাই আনলাম।”

ট্রাকের ছাদে বসে যাচ্ছিলেন তানিয়া নামে একজন পোশাক শ্রমিক। করটিয়ায় জটে আটকা পড়েছিলেন তিনি।

তানিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাত ১০টায় সাভার থেকে রওনা হইছি। এখন ভোর ৬টা। এখন কেবল এখানে আইছি। জানি না কখন বাড়ি যাইতে পারব।”

রসুলপুরে আটকা পড়া উত্তরবঙ্গগামী সাকের নামের একজন বাসচালক বলেন, “অন্যবারের থেকে এবার মনে হয় যানজট বেশি হইতাছে।”

এই দীর্ঘ সময় পথে আটকা পড়া যাত্রীদের মধ্যে যারা রয়েছেন ট্রাকে বা বাসের ছাদে তাদের দুর্ভোগ আরও বেশি। ধুলো, ধোঁয়া আর রোদে পুড়তে পুড়তে তাদের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। শিশু ও বয়স্করা পড়ছেন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।

টাঙ্গাইল ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর এশরাজুল হক বলেন, “উত্তরবঙ্গের দিকে সড়কের ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যানবাহন থাকায় সিরাজগঞ্জ প্রান্তে গাড়ি টানতে পারছে না। সেই সঙ্গে কিছু গাড়ি রাস্তায় বিকল হয়। বিকল গাড়ি সরাতে সরাতে জট লাগে। এসব কারণে জট লাগে।”

একই বক্তব্য বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাসুদ রায়হানেরও।

তিনি বলেন, “সিরাজগঞ্জ থেকে গাড়ি না টানতে পারার কারণে সেতু দিয়ে যান পারাপার বন্ধ থাকে মাঝেমধ্যেই। তাই ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত জট লাগে।”

শনিবার ভোর ৬টা থেকে রোববার ভোর ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩ হাজার ২০২টি গাড়ি পার করে এই সময় দুই কোটি ৪৩ লাখ ৬৭ হাজার ১৩০ টাকা টোল আদায় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল।

তিনি আরও বলেন, “সিরাজগঞ্জ প্রান্তে কড্ডা মোড়, হাটিকমরুল ও নকলা এলাকায় গাড়ি টানতে না পারায় সেতুতে কয়েকবার গাড়ি পার বন্ধ ছিল।”

এছাড়া টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় জানিয়েছেন রাস্তা সংকটের কথা।

তিনি বলেন, “ঢাকার চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেইনের কাজ শেষের দিকে। সেখানে চার লেইনের সুবিধা রয়েছে। কিন্তু এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটারে রয়েছে দুই লেইন। তাই চার লেইনের গাড়ি দুই লেইনে গিয়ে জট পাকাচ্ছে। তবে প্রায় ৭০০ পুলিশ পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।

“এছাড়া এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় খানাখন্দের কারণে গাড়ির গতি কমে যাচ্ছে। ফলে যানজট ও ধীরগতি হচ্ছে।”

তবে বিকেল পর্যন্ত যান চলাচলে স্বাভাবিক গতি ফিরে আসবে বলে তিনি তার আশার কথা জানিয়েছেন।