নীলফামারীতে স্যানিটারি মিস্ত্রিকে ‘পিটিয়ে হত্যা’

নীলফামারীতে তুচ্ছ ঘটনায় এক শ্রমজীবী যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

বিজয় চক্রবর্তী কাজল নীলফামারী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 June 2019, 02:10 PM
Updated : 22 June 2019, 03:12 PM

শনিবার রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জুয়েল ইসলামের (২২) মৃত্যু হয়। তিনি নীলফামারী সদর উপজেলার ইটাখোলা ইউনিয়নের শ্রীনাথ গ্রামের মৃত সুলতান আলীর ছেলে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার জেলা সদরের হাতিবান্ধায় নীলফামারী-জলঢাকা সড়ক দেড়ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

গত বৃহস্পতিবার নীলফামারীর রামনগর ইউনিয়নের বিষমুড়ি গ্রামে একই এলাকার মহির উদ্দিন ও তার দুই ছেলে জুয়েলের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে।

জুয়েল ইসলাম

প্রত্যক্ষ্যদর্শী ও এলাকাবাসী জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে রামনগর ইউনিয়নের বিশমুড়ি গ্রামের হবিবর রহমানের হোটেলে পানি সরবরাহের পাইপ স্থাপনের কাজ করছিলেন টাইলস্ ও স্যানিটারি মিস্ত্রি জুয়েল ইসলাম, তার সহযোগী ছোট ভাই সুমন এবং চাচাত ভাই জনাব আলী।

জনাব আলী জানান, তারা কাজ করার সময় স্থানীয় মহির উদ্দিন ওরফে কালা মহির তাদের বাড়িতে পানি সরবরাহের লাইন স্থাপনের কাজ দেখাতে হোটেল থেকে ডেকে নিয়ে যান জুয়েল ও তাকে (জনাব আলী)। কাজ দেখে পরদিন করে দিবেন বলে হোটেলে ফিরে এসে পুনরায় কাজটি শুরু করেন তারা।

“এদিকে, মহির উদ্দিন তার দুই ছেলে এসে তখনই তাদের কাজটি করার জন্য জুয়েলকে চাপ প্রয়োগ করেন। তাতে রাজি না হওয়ায় মহির উদ্দিন ও তার দুই ছেলে নূর কামাল ওরফে লুক্কা (৩২) ও ইদ্রিস আলী (৩০) জুয়েল ও আমাকে মারপিট করতে থাকেন।”

এ সময় জনাব আলী পালাতে সক্ষম হলেও জুয়েল গুরুতর আহত হন বলে জনাব আলীর ভাষ্য।

এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে নীলফামারী সদর থানার ওসি মমিনুল ইসলাম বলেন, জুয়েলকে উদ্ধার করে প্রথমে নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে শুক্রবার রাতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় তাকে। সেখানে শনিবার সকালে জুয়েলের মৃত্যু হয়।

তিনি জানান, মারপিটের ঘটনায় শুক্রবার রাতে জেলা নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি আবুল কালাম ভুট্টু বাদী হয়ে মহির উদ্দিন ও তার তিন ছেলের নামে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

রংপুর মেডিকেল মর্গে মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর এই মামলাটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হবে বলে ওসি জানান।

হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে বলেও তিনি জানান।

এলাকাবাসী জানায়, এই খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী হত্যার বিচারসহ মহির উদ্দিন ও তার দুই ছেলেকে গ্রেপ্তারের দাবিতে সকাল ১০টা থেকে নীলফামারী-জলঢাকা সড়ক অবরোধ করে। এ সময় ওই সড়কের সবধরণের যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং সড়কের দুই পাশে বহু যানবাহন আটকা পড়ে। 

প্রায় দেড় ঘণ্টা পর পুলিশের মধ্যস্থতায় অবরোধ তুলে নেন বিক্ষুব্ধরা।

জুয়েলের বাড়িতে শোকের মাতম

জুয়েলের বাড়িতে চলছে স্বজনদের শোকের মাতম। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে প্রায় বাকরুদ্ধ তার মা জুলেখা বেগম (৫০)।

জুয়েলের বড় চাচা হুজুর আলী (৬০) বলেন, পরিবারের দুই ভাইয়ের মধ্যে জুয়েল সবার বড়। জুয়েলের বাবার মৃত্যু হয়েছে ১২ বছর আগে। পরিবারের অনটনে ছোটভাই মানিক (১৫) লেখাপড়া ছেড়ে বড়ভাইয়ের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। দেড়বছর আগে বিয়ে করেন জুয়েল। তার স্ত্রী লাবনী আক্তার বর্তমানে নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। জুয়েলের বাবার মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়েছিল পরিবারটি। সে ধাক্কা কাটিয়ে পরিবারের হাল ধরতে না ধরতেই জুয়েলের মৃত্যুতে আবার অসহায় হয়ে পড়ল পরিবারটি।