জাজিরায় বোমা বিস্ফোরণে যুবকের কব্জি উড়ে গেছে

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় বোমা বিস্ফোরণে পাঁচজন আহত হয়েছেন, যাদের একজনের হাতের কব্জি উড়ে গেছে।

শরীয়তপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2019, 01:36 PM
Updated : 11 June 2019, 01:53 PM

পালেরচর বকসু মাদবর কান্দি গ্রামে সোমবার রাতে বোমা বানাতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।

আহতরা হলেন জসিম ফকির (২৬), জুয়েল সরদার (৩০), আর্শেদ ফকির (২৫), আব্দুল লতিফ ফকির (২২) ও সোহাগ হাওলাদার (২২)।

এদের মধ্যে প্রথম চারজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সোহাগ পালিয়ে গেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বোমা বানানোর সরঞ্জামসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করেছে।

স্থানীয় দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধের জেরে একটি পক্ষ বোমা বানাচ্ছিল বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।

স্থানীয় বকসু মাদবর কান্দি গ্রামের নিপা আকতার জানান, গ্রামের বাসিন্দা পালেরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা তোতা সরদার ও আব্দুল লতিফ সরদারের সঙ্গে আরেক আওয়ামী লীগ নেতা মনির হোসেন মাদবেরের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল।

নিপা বলেন, গত ঈদুল ফিতরের পর থেকে তোতা ও লতিফ সরদারের সমর্থকদের মনির সরদার সমর্থকরা স্থানীয় ঝিনুক মার্কেটের বাজারে যেতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

“এর জেরে, গত সোমবার বিকালে ঝিনুক মার্কেটে তোতা সরদারের ছেলে রানা সরদার ও মেম্বার রনি মাদবরের মধ্যে এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। কিছুক্ষণ পরে মনির সরদার সমর্থক ২০/২৫ জন লোক লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এ সময় লতিফ সরদারের বাড়ির টিনের বেড়া ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আতংক সৃষ্টি করে।”

নিপা বলেন, সোমবার রাতে মনির মাদবর সমর্থক পালেরচর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা রনি মাদবরের ঘরে বসে তার পাঁচ আত্মীয় জসিম ফকির, জুয়েল সরদার, আর্শেদ ফকির, আব্দুল লতিফ ফকির ও সোহাগ হাওলাদার বোমা বানাচ্ছিল।

“রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টায় ওই ঘরে বিকট আওয়াজে বোমা বিস্ফোরিত হলে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে গিয়ে পাঁচচজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে।

“এদের মধ্যে বোমার আঘাতে জসিম ফকিরের বাম হাতের কব্জি উড়ে গেছে।”

তাকেসহ চারজনকে প্রথমে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাদের ঢাকায় পাঠানো হয় বলে নিপা জানান।

আরেক আহত মনির সরদারের ভাগ্নে সোহাগ হাওলাদার পালিয়ে গেছে বলে তিনি জানান।

ইউপি সদস্য রনি মাদবরের মা রাজিয়া বেগম বলেন, “আমাদের বাড়িতে বসে আমার চার নাতি গল্প করছিল। এ সময় আমাদের শত্রুপক্ষের লোকরা রাত অনুমান সাড়ে ১১টায় বোমা মারে। আমি শব্দ পেয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসলে এরা পালিয়ে যায়।”

মনির সরদার বলেন, “আমার সমর্থক ৪/৫ জন লোক রনি মেম্বারের বাড়িতে ঘরের ভিতর চেয়ারে বসে গল্প করছিলেন। এ সময় প্রতিপক্ষের লোকজন আমার সমর্থকদের হত্যা করার উদ্দেশ্যে বোমা মেরে পালিয়ে যায়।”

এ ব্যাপারে আব্দুল লতিফ সরদার বলেন, “ঈদের পর থেকে মনির মাদবর, রনি মাদবর গংরা আমাদের সমর্থক কাউকেই ঝিনুক মার্কেটে উঠতে দিচ্ছে না। ফলে আমাদের সমর্থকদের বাড়ির নারীরা বাজারে গিয়ে নিত্যপণ্য ক্রয় করছে। এমতাবস্থায় সোমবার বিকালে ঝিনুক মার্কেটে কথাকাটা কাটির জের ধরে আমার বাড়িতে হামলা করে। বেড়া কুপিয়ে তছনছ করেছে। আমাদের ক্ষতি করার জন্য রাতে বোমা বানাতে গিয়ে এরা পাঁচজন আহত হয়।”

জাজিরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির  উদ্দিন শেখ বলেন, “সোমবার রাতে ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে ও ঘটনাস্থলে যাই। একপক্ষ অপর পক্ষকে দোষারোপ করছে। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে বোমা বানাতে গিয়ে এরা আহত হয়েছে। এদের একজনের হাতের কব্জি উড়ে গেছে।”

যে বিছানায় বসে বোমা বানানোর সময় বিস্ফোরণ হয়েছে ওই বিছানা পুলিশ রনি মাদবরের বাড়ির পাশ থেকে উদ্ধার করেছে। এ ব্যাপারে আরও তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।