শিক্ষককে পেটানোর মামলা আ. লীগ নেতার বিরুদ্ধে

পাবনায় শিক্ষা অফিসারের উপস্থিতিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষককে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে।

পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2019, 04:27 PM
Updated : 24 April 2019, 04:27 PM

মঙ্গলবার বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া-জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় বুধবার ওই প্রধান শিক্ষক শামীম আক্তার বাদী হয়ে বেড়া মডেল থানায় মামলা করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, হাটুরিয়া-জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই বিঘা আয়তনের একটি পুকুর লিজ দেওয়ার অর্থ নিয়ে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি নুরুল ইসলামের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক শামীম আক্তারের তিক্ততা চলছিল।

আহত প্রধান শিক্ষক শামীম আকতার বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম বিদ্যালয়ের পুকুর ৯ বছর ধরে লিজ দিয়ে টাকা তুলে বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।

“এবারও পুকুরটি বিদ্যালয়ের সদস্য আব্দুল আলীমকে লিজ দিয়ে টাকা বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা না দিয়ে সভাপতি ও সদস্য আলীম ভাগ করে নেন।”

প্রধান শিক্ষক শামীম আরও বলেন, বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে পুকুর লিজের টাকা বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা দেওয়ার জন্য সভাপতিকে তিনি অনুরোধ করেছেন; কিন্তু তিনি শোনেননি।

“বরং বিষয়টি নিয়ে সভাপতি ও তার সহযোগী আমার ওপর ক্ষিপ্ত হন।”

তিনি বলেন, “মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আবু সাইদ বিদ্যালয়ে আসেন। বিষয়টি সভাপতিকে জানাই এবং তাকে বিদ্যালয়ে আসতে বলি। কিছুক্ষণ পর সভাপতি তার দুই সহযোগী আব্দুল আলীম ও আলতাফ হোসেনকে নিয়ে আমার কক্ষে আসেন।

“এ সময় নুরুল ইসলাম সহকারী শিক্ষা অফিসারের কাছে আমার বিরুদ্ধে বানোয়াট ও মিথ্যা অভিযোগ দেন। এসবের প্রতিবাদ করায় নুরুল ইসলাম আমার ওপর চড়াও হন। এক পর্যায়ে আমাকে কিলঘুষি ও অফিসের চেয়ার তুলে মারধর করেন। তার সঙ্গে থাকা দুই সহযোগীও আমাকে মারধর করেছেন।”

এ ঘটনার পর আহত প্রধান শিক্ষক শামীম আকতার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সহকারী শিক্ষা অফিসার আবু সাইদকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানান।

পরে তাদের পরামর্শে বেড়া মডেল থানায় সভাপতি ও তার দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা করেন প্রধান শিক্ষক।

উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আবু সাইদ বলেন, “প্রধান শিক্ষককে আমার সামনে মারধর করেছেন ওই নুরুল ইসলাম ও তার দুই সহযোগী। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজি নুরুল ইসলাম বলেন, “ঘটনাটি আসলে এত বড় কিছু নয়। প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে একটু ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। শুধু শুধু আপনারা অতিরঞ্জিত করছেন।”

এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আনাম সিদ্দিকী বলেন, “প্রধান শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের একটি কপি বেড়া মডেল থানায় এবং উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।”

তদন্তে সত্যতা পেলে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ইউএনও জানান।

বেড়া মডেল থানা পুলিশের ওসি শাহিদ মাহমুদ খান বলেন, “প্রধান শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত শুরু করেছি। এলাকায় পুলিশ পাঠানো হয়েছে; কিন্তু সভাপতিসহ অভিযুক্তদের পাওয়া যায়নি। তারা পলাতক।”

এদিকে প্রধান শিক্ষককে পেটানোর ঘটনায় এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকরা বৃহস্পতিবার এ ঘটনার প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে।