এসপি হারুনের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে শামীম ওসমান

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 April 2019, 06:00 PM
Updated : 14 April 2019, 06:00 PM

সম্প্রতি শামীম ওসমান ও এসপি হারুনের পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধমকির সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই রোববার পুলিশ সুপারের বাংলোয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে দুজনের দেখা হল।  

শামীম ওসমান এসপির সঙ্গে একই টেবিলে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন।

জেলা পুলিশ প্রশাসনের আয়োজনে এই বর্ষবরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বাঙালি খাবারের আয়োজনও ছিল; যেখানে ছিল পান্তা ভাত, মাছ ভাজা, আলু ভর্তাসহ বিভিন্ন রকম ভর্তা, ফল, চটপটি ও কফি।

শামীম ওসমান অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছার পর এসপি হারুন অর রশীদ তাকে স্বাগত জানান। এ সময় এসপি পত্নীসহ জেলা পুলিশের অন্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল হাই, নারায়ণগঞ্জ পাবলিক প্রসিকিউটর ওয়াজেদ আলী খোকন ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।

গাজীপুর জেলার সাবেক পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ নারায়ণগঞ্জে যোগদানের পর বিভিন্ন পুলিশি অভিযানে নারায়ণগঞ্জে প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।

২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর পুলিশের ব্যবহৃত ওয়্যারলেস সেটে গোপন নিদের্শনা ও তথ্য ফাঁস করার অভিযোগে শামীম ওসমানের দেহরক্ষী কনস্টেবল মামুন ফকিরের কাছ থেকে ওয়্যারেলেস সেট প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

চলতি বছরের ১৪ মার্চ থেকে ১৭ র্মাচ সংসদীয় এলাকা ছেড়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে শামীম ওসমানের নিরাপত্তা না দিয়ে তার ছেলে অয়ন ওসমানের সঙ্গে কক্সবাজারে অস্ত্রসহ অবস্থান করায় দেহরক্ষী মামুন ফকিরকে কিশোরগঞ্জে বদলি করা হয়। এরপর শামীম ওসমানকে দেহরক্ষী দেওয়া হলেও তিনি এখনও তা নেননি।

গত ২৭ মার্চ অয়ন ওসমানের স্ত্রীর বড় ভাই ভিকির বিরুদ্ধে নগরের জামতলায় অস্ত্রসহ সিঙ্গাপুর প্রবাসী আজিজুল গাফফার খানের জমি দখলের চেষ্টা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

গত ১ এপ্রিল রাতে পাগলার মেরী অ্যান্ডারশনে ভাসমান জাহাজ থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ বিপুল পরিমাণ মাদকসহ ৭০ জনকে গ্রেপ্তার করে।

এখানে আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে রেস্টুরেন্ট ও বারের মালিক সঞ্জয় রায় ও শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহম্মেদ টিটুর নাম আসে। তাদের সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জ ক্লাবসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তারা মাদক সংগ্রহ করে মাদক বিক্রি করে আসছেন বলে পুলিশকে জানান।

এই ঘটনায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই প্রকাশ চন্দ্র সরকার বাদী হয়ে ৭০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন, যাদের মধ্যে ২৫ জন মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে বলে পুলিশের ভাষ্য।  

গত ২৯ মার্চ সদর উপজেলার ফতুল্লায় এক অনুষ্ঠানে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ্ নিজাম পুলিশ প্রশাসন ও সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানার তৎকালীন ওসি মঞ্জুর কাদের সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

এর আগে ২০ জানুয়ারি ফতুল্লার পাগলার হত্যাসহ ১১ মামলার আসামি স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাংসদ শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মীর হোসেন মিরুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এর আগে নগরের নিতাইগঞ্জের আধিপত্য বিস্তার ও মসজিদের টাকার হিসাব নিয়ে বর্তমান কাউন্সিলর কবির হোসেন ও সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্নার সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ দুপক্ষের বর্তমান ও সাবেক কাউন্সিলরসহ ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়।

বর্তমান ও সাবেক কাউন্সিলর ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ।

এসব নানা ঘটনায় সাংসদ শামীম ওসমানের সঙ্গে এসপি হারুনের দ্বন্দ্ব হয়।

এসব ঘটনার জের ধরে গত ৬ এপ্রিল শনিবার নগরের ইসদাইরে বাংলা ভবন কমিউনিটি সেন্টারে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ব্যানারে তার অনুগত নেতাকর্মীদের নিয়ে আয়োজিত জরুরি কর্মীসভায় শামীম ওসমান এসপি হারুনকে ইঙ্গিত করে বলেন, “শাহ্ নিজামের বিরুদ্ধে জিডি করবেন, টিটুর বিরুদ্ধে মদ সাপ্লাইয়ের মামলা দিয়েছেন বলে মনে করছেন, আমরা ভয় পেয়ে গেছি। এগুলো করে আমাকে কাবু করতে পারবেন না। কাউন্সিলরকে ঢুকাবেন, ওই চেয়ারম্যানকে ফাঁসাব, কন্ট্যাক্টে যাব, চারদিকে চাঁদাবাজি শুরু করব, ব্যবসায়ীদের ফোন করব। বাস মালিকদের কাছ থেকে চাঁন্দা তুলবেন, অটোরিকশার কাছ থেকে পয়সা খাবেন- ওইটা হবে না।”

শামীম ওসমান এসপিকে ইঙ্গিত করে আরও বলেন, “আগামী ১০/১২ দিনের মধ্যে টের পাইবেন। মানুষ সন্ত্রাসীকে দেখতে চায় না। পোশাকধারী সন্ত্রাসীকে মানুষ দেখতে চায় না। মশা মারতে কামান দাগানোর দরকার নেই।”

এসপি হারুনও পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, “মাদক, সন্ত্রাস ও ভুমিদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। অপরাধী যত বড়ই হোক না তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। অপরাধী যদি কোনো বড় ভাই পর্দার আড়ালের কোনো গডফাদারের লোক হয়েও থাকে, তাহলে আমাদের কিছু করার নেই।”