নারায়ণগঞ্জে ৩ নারীকে ‘যৌনকর্মী আখ্যা দিয়ে বেঁধে নির্যাতন’

পাওনা টাকা চাওয়ার জেরে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় তিন নারীকে যৌনকর্মী আখ্যা দিয়ে গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Feb 2019, 06:25 PM
Updated : 19 Feb 2019, 07:36 AM

উপজেলার কলাবাগ এলাকার এ ঘটনায় সোমবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর বন্দর থানার পুলিশ ইউসুফ মেম্বার নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে।

মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক জেলা ও দায়রা জজ আল মাহমুদ ফায়জুল কবীর জানান, ‘তিন নারীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে’ বলে তারা তথ্য-প্রমাণ পেয়েছেন।

নির্যাতিত এক নারী সাংবাদিকদের বলেন, তিনি সুদে টাকা খাটিয়ে সংসার চালিয়ে আসছেন। কয়েক মাস আগে একই এলাকার জীবন ও উম্মে হানী নামে দুইজনকে তিনি দুই দফায় এক লাখ ৩৭ হাজার টাকা ঋণ দেন।

“সম্প্রতি সেই টাকা ফেরত চাওয়ায় তাদের সঙ্গে বিরোধ বাধে। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ইউসুফের সহযোগিতা চাইলে তিনি উল্টো আমাকে শাসিয়ে দেন। শনিবার বিকালে জীবন ও তার লোকজন আমার বাড়ি গিয়ে আমাকে ও আমার দুই আত্মীয়কে যৌনকর্মী আখ্যা দিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে পেটায়।”

মারধরের পাশাপাশি তারা তিন নারীর চুল কেটে দেন বলে অভিযোগ।

ওই নারী বলেন, “একপর্যায়ে তারা আমাদের গায়ের কাপড় খুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর বাড়িতে লুটপাট ও ভাঙচুর চালায়। তারা আমাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখায়। আমাদের র‌্যাবের কাছে দিয়ে দেবে বলেও ভয় দেখায়।”

ঘটনার দিন থানায় গেলে পুলিশ তাদের মামলা নেয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, “পুলিশ বলেছে ইউসুফ মেম্বারের কথা ছাড়া থানায় মামলা হবে না।”

ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পেরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন থেকে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি সোমবার নারায়ণগঞ্জে যায়। কমিটির সদস্যরা নির্যাতিত তিন নারীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন এবং পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন।

কমিশনের পরিচালক জেলা ও দায়রা জজ আল মাহমুদ ফায়জুল কবীর বলেন, “তিন নারীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সাথে আমরা কথা বলেছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন অপরাধীদের আইনের আওতায় আনবেন।”

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অভিযোগ ও তদন্ত বিভাগের পরিচালক নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আল মাহমুদ ফায়জুল কবীর, কমিশনের উপ-পরিচালক গাজী সালাহ উদ্দিন এবং সদস্য বাঞ্চিতা চাকমা।

এ বিষয়ে জেলার পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ বলেন, “বিষটি জানার সাথে সাথে বন্দর থানার ওসিকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুনেছি ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় ইউপি মেম্বার ইউসুফ হোসেন নামে একজন জড়িত রয়েছেন। ইউসুফ মেম্বারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

অন্য যারা জড়িত তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “নির্যাতিত নারীদের পক্ষ থেকে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে।”

এ ঘটনায় নির্যার্তিত এক নারী বাদী হয়ে নয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন বন্দর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম।

আসামি ধরতে পুলিশের কয়েকটি টিম কাজ করছে বলেও তিনি জানান।