কুতুপালং ক্যাম্পে পয়ঃবর্জ্য শোধনাগার উদ্বোধন

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি পয়ঃবর্জ্য শোধনাগার  চালু হয়েছে।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2019, 02:01 PM
Updated : 29 Jan 2019, 02:01 PM

মঙ্গলবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রাহমান এ শোধনাগারের উদ্বোধন করেন।

আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘অক্সফ্যাম’ ও জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ‘ইউএনএইচসিআর’ এর যৌথ সহায়তায় কুতুপালং ক্যাম্প-৪ এ পয়ঃবর্জ্য শোধনাগার টি স্থাপিত হয়েছে।

শোধনাগারটিতে দেড় লাখেরও বেশি মানুষের পয়ঃবর্জ্য শোধন করা সম্ভব হবে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী এনামুর জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, মূলত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিপুল পয়ঃবর্জ্য যত্রতত্র না ফেলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে বৈজ্ঞানিক উপায়ে পরিশোধনের জন্য এ প্ল্যান্টটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ ধরনের প্ল্যান্ট জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নিরাপদ।

প্ল্যান্টটিতে আকাঙ্ক্ষিত সাফল্য এলে পরবর্তীতে সব ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের পয়ঃবর্জ্য শোধনের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

“প্ল্যান্টটি নির্মাণে গাছ, বাঁশ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। এটি নকশা প্রণয়নে বেছে নেওয়া হয়েছে খাড়া ও উঁচু পাহাড়। এতে প্ল্যান্টির রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনায় জনবলের পাশাপাশি ব্যয়ও কম হবে।”

এ শোধনাগারটির সাফল্যের ভিত্তিতে দেশের বড় বড় শহরে স্থাপনের জন্য এটি রোল মডেল হিসেবে কাজে আসবে বলে মনে করেন এনামুর।

অক্সফ্যামের ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন প্রকৌশলী সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব কমানোর জন্য নিরাপদ স্যানিটেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী ক্যাম্পের বিপুল সংখ্যক মানুষের পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি চ্যালেঞ্জ।

“পরিবেশবান্ধব এ প্ল্যান্টটি শরণার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেবে। প্রতিদিন গড়ে চল্লিশ কিউবিক মিটার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা রয়েছে এ প্ল্যান্টের। কম বিনিয়োগের পাশাপাশি এটির পরিচালনা ব্যয়ও কম। অন্তত ২০ বছর ধরে এটির কার্যকারিতা থাকবে।”

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাসকারী বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার পয়ঃবর্জ্য শোধনের আওতায় আনতে আরও অন্তত চারটি কেন্দ্রীয় শোধনাগার স্থাপন করা প্রয়োজন বলে জানান প্রকৌশলী সালাহ উদ্দিন।

ভবিষ্যতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা হলে পয়ঃবর্জ্য শোধনাগারটি স্থানীয়দের কাজে লাগানো সম্ভব বলে জানান অক্সফামের এ কর্মকর্তা।

কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব এস এম শাহ কামাল, শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও ত্রাণ কমিশমার আবুল কালাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সরওয়ার কামাল, অক্সফামের কান্ট্রি ডিরেক্টর দীপংকর দত্ত, ইউএনএইচসিআর এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি স্টিভ করলিস ও ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেটর গ্রুপসহ (আইএসসিজি) প্রশাসনের ও বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে প্রতিমন্ত্রী এনামুর রাহমান সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা থেকে বিমানযোগে কক্সবাজার পৌঁছান। পরে সেখান থেকে তিনি উখিয়ার কুতুপালং যান।

২০১৭ সালের অগাস্টের শেষ সপ্তাহে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের নিপীড়নের শিকার হয়ে রাখাইন রাজ্য থেকে মুসলিম রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া শুরু করে। এই দেড় বছরে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া আগে থেকেই ছিল চার লাখ রোহিঙ্গা।