মেঘনায় ট্রলারডুবি: উদ্ধার কাজ সমাপ্ত, ট্রলার মালিক রিমান্ডে

মুন্সীগঞ্জে মেঘনা নদীতে ট্রলারডুবিতে ১৮ জন নিখোঁজ থাকার মধ্যেই উদ্ধার কাজ শেষ করা হয়েছে।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2019, 03:31 PM
Updated : 21 Jan 2019, 03:31 PM

জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা জানান, টানা ছয় দিন উদ্ধার অভিযানে ট্রলারটির সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাই সার্বিক বিবেচনায় উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আবার কোনো ক্লু পাওয়া গেলে শুরু করা হবে।

এদিকে, এ দুর্ঘটনায় ট্রলারের মালিক জাকির দেওয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একদিনের হেফাজতে (রিমান্ড) নেওয়ার আদেশ দিয়েছে আদালত।

গত সোমবার রাত পৌনে ৪টার দিকে মেঘনা নদীতে তেলের ট্যাংকারের ধাক্কায় ৩৪ জন শ্রমিকসহ একটি মাটিবোঝাই ট্রলার ডুবে যায়। ১৪ জন সাঁতার কেটে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও নিখোঁজ হন ২০ শ্রমিক। এপর্যন্ত দুই জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএ-এর চেয়ারম্যান কমডোর মোজাম্মেল হক জানান, সোমবারও সারাদিন মেঘনায় তল্লাশি চালিয়ে ট্রলারটি শনাক্ত করা যায়নি। সোমবার সন্ধ্যায় উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বেঁচে যাওয়া শ্রমিকরাও সঠিকভাবে স্থানটি দেখাতে পারছে না। তাছাড়া মেঘনায় বালু উত্তোলনের কারণে নদীর তলদেশে বিশাল বিশাল গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। আর মাটির নৌকা ডুবে যাওয়ার পর তলদেশ থেকে চিহ্নিত করা কঠিন।

এদিকে, মুন্সীগঞ্জ আমলী আদালত-৫ ট্রলার মালিকের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।

ট্রলারডুবির ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আরশেদ আলী বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পুলিশ সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। শুনানি শেষে আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

রোববার নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটি এলাকা থেকে ট্রলার মালিক জাকির দেওয়ানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ট্রলারডুবির ঘটনায় মামলার ২ নম্বর আসামি তিনি। প্রধান আসামি ট্রলারটির চালক পলাতক রয়েছেন।

এছাড়া দুর্ঘটনার জন্য দায়ী তেলের ট্যাঙ্কারটির অজ্ঞাত পরিচয় চালক তৃতীয় আসামি। ট্যাঙ্কারটির এবং তার চালকের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

দুই শ্রমিকের লাশের পরিচয় মিলেছে

মেঘনায় নদীতে ভেসে ওঠা দুই শ্রমিকের লাশের পরিচয় পাওয়া গেছে। একজন রহমত আলী (৩৯) ও অপরজন রফিকুল ইসলাম (৩৭)। নিখোঁজ থাকছে আরও ১৮ জন।

রহমত আলী সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার গজাইল গ্রামের মৃত মইজউদ্দিন ছেলে। রোববার সকালে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া লঞ্চঘাটের কাছে মেঘনায় লাশটি ভেসে উঠে।

রোববার রাতে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে তার ভাই সোহেল রানা নিখোঁজ ওই শ্রমিকের মরদেহ শনাক্ত করেন।

ষাটনলে উদ্ধার হওয়া অপর লাশটি রফিকুল ইসলামের। রোববার রাত পৌনে ১২টার দিকে চাঁদপুর মর্গে চাচাত ভাই সাইদুর রহমান লাশ শনাক্ত করেছেন। রফিকুল পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের মুন্ডুমালা গ্রামের লয়ান ফকিরের ছেলে।

এখনও নিখোঁজ ১৮ জন

নিখোঁজ ১৮ জনের মধ্যে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের মুন্ডুমালা গ্রামের গোলাই প্রামাণিকের ছেলে সোলেমান হোসেন, জব্বার ফকিরের ছেলে আলিফ হোসেন ও মোস্তফা ফকির, গোলবার হোসেনের ছেলে নাজমুল হোসেন-১, আব্দুল মজিদের ছেলে জাহিদ হোসেন, নূর ইসলামের ছেলে মানিক হোসেন, ছায়দার আলীর ছেলে তুহিন হোসেন, আলতাব হোসেনের ছেলে নাজমুল হোসেন-২, দাসমরিচ গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে ওমর আলী ও মান্নাফ আলী, তোজিম মোল্লার ছেলে মোশারফ হোসেন, আয়ান প্রামাণিকের ছেলে ইসমাইল হোসেন, সমাজ আলীর ছেলে রুহুল আমিন, মাদারবাড়িয়া গ্রামের আজগর আলীর ছেলে আজাদ হোসেন, চণ্ডিপুর গ্রামের আমির খান ও আব্দুল লতিফের ছেলে হাচেন আলী,  রজব আলীর ছেলে শফিকুল এবং সিরাজ মিস্ত্রী।

প্রত্যয় ফিরে যাচ্ছে

বিআইডব্লিউটিএ-এর চেয়ারম্যান কমডোর মোজাম্মেল হক জানান, মেঘনায় ট্রলারডুবির উদ্ধার অভিযান সোমবার সন্ধ্যায় সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার সারাদিন মেঘনায় তল্লাশি চালিয়েও ট্রলারটি শনাক্ত করা যায়নি। টানা ছয় দিন চেষ্টার পর বন্ধ ঘোষণা করতে হয়েছে। তাই মঙ্গলবার সকালে উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’ নারায়ণগঞ্জে ফিরে আসবে।