ফরিদপুরে শিমের বাম্পার ফলনে কৃষকের হাসি

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার শিমের ভাল ফলন হয়েছে; সঙ্গে দাম বেশি থাকায় হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে।

ফরিদপুর প্রতিনিধিমফিজুর রহমান শিপন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Jan 2019, 06:49 AM
Updated : 9 Jan 2019, 06:59 AM

উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। 

এ উপজেলার কৃষ্ণপুর, সদরপুর, চরবিষ্ণুপুর, চরনাছিরপুর, ভাষাণচর ও আকোটেরচর ইউনিয়নে উৎপাদিত শিম প্রতিদিন দেশের বিভিন্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে বলে স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন। 

সদরপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা বিধান রায় বলেন, “শিম প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি সবজি; এর বিচিও সবজি হিসেবে খাওয়া যায়।তাই দেশে এর চাহিদা বেশি। আর এবার এ এলাকায় নতুন ‘বারি-৪’ ও ‘ইপসা-১’ জাতের শিমের ফলন ভালো হয়েছে। পাশাপাশি দামও বেশি থাকায় চাষিরা খুশি।”

উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের শৌলডুবী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রত্যেক চাষির জমিতে প্রচুর শিমের মাচা। ছড়ায় ছড়ায় ঝুলছে শিম।

ওই এলাকার সবজি চাষি আলম বেপারী (৪৮) নিজেকে সফল শিম চাষি হিসেবে গড়ে তুলেছেন।বর্তমানে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সারাদিন শিমের মাচায় হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে বিক্রির পাশাপাশি বীজ উৎপাদন করছেন বলে জানান তিনি। 

আলম বলেন, গত বছর ছয় হাজার টাকা খরচ করে ২০ শতাংশ জমিতে শিম চাষ করে প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করেছেন। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে চলতি মৌসুমে ১৮/২০ হাজার টাকা খরচ করে ৬৫ শতাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল শিমের চাষ করেন।

এর মধ্যে ৩০ শতাংশ শুধু বীজ উৎপাদনের জন্য এবং বাকী ৩৫ শতাংশ জমির শিম সবজি হিসেবে গত এক মাস ধরে বাজারে বিক্রি করছেন বলে জানান তিনি।

কৃষ্ণপুর, সদরপুর, চরবিষ্ণুপুর, চরনাছিরপুর, ভাষাণচর ও আকোটেরচর ইউনিয়নের চাষিরা জানান, ফরিদপুর শহর, বোয়ালমারী, রাজধানীর শহরের কারওয়ান বাজারর, শ্যামবাজার, ঢাকার দোহার উপজেলার জয়পাড়া, মাদারীপুরে শিমের ভালো চাহিদা রয়েছে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, শিম ক্ষেত থেকে তুলে তোলার পর বাড়ির উঠানে বা সড়কের পাশে স্তপ করা হচ্ছে। পরে বস্তায় ভরে ওজন দিয়ে মণ হিসাবে পাইকারী ও খুচরা দরে সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে।পাইকারেরা স্থানীয় হাট-বাজার থেকে শিম ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করেন।

ভাষানচর ইউনিয়নের কারীরহাট গ্রামের আব্দুল মালেক মোড়ল (৩৯) জানান, এ বছর তিনি নয় হাজার টাকা খরচ করে ৩৩ শতাংশ জমিতে শিম চাষ করেছেন। ইতেমধ্যেই তার পুঁজি উঠে গেছে। বিক্রিও হয়েছে বেশ ভাল।

একই গ্রামের চাষি ইউনুছ খালাসী (৫৪) বলেন, “ভালোভাবে শিম ক্ষেতের পরিচর্যা করেছিলাম। যে টাকা খরচ হয়েছিল তার চেয়ে বেশি লাভ উঠেছে। আগামীতে আরও বেশি চাষ করব।”

চরবিষ্ণপুর ইউনিয়নের কৃষক খবির উদ্দিন (৪৫) বলেন, “এ বছর ৩০ শতাংশ জমিতে শিম চাষ করে ভালো ফলন হয়েছে।”

ওই গ্রামের আরেক সবজি চাষি জোনায়েত আলী (৪৮) প্রায় ৩৩ শতাংশ জমিতে শীতকালীন শিম চাষ করে লাভ করেছেন বলে জানিয়েছে।

তিনি বলেন, “এই বছর পোকা মাকড়ের উপদ্রব কম। অন্য মৌসুমবাদে শীতকালীন সময়ে শিম চাষের চেয়ে শিম চাষে রোগবালাই অনেকাংশে কম। তাই ওষুধ ও সার খরচও কম। এ সময় শিমের বাজারদামও ভালো। প্রতিকেজি শিমের পাইকারি মূল্য পেয়েছি ১৫ থেকে ২০ টাকা। প্রতিমণ শিম ৫২০ থেকে ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।”

উপজেলার চরনাছিরপুর ইউনিয়নের সবজি চাষি আব্দুর রাজ্জাক করিম (৪২) বলেন, শ্রাবণ মাসের প্রথম দিকে এই শিমের বীজ বপন করতে হয়। চারা বের হওয়ার ২৫ থেকে ৩০ দিনের মাথায় গাছে ফুল আসা শুরু হয়।

দেড় মাস বয়সের গাছ থেকে শিম তোলা শুরু হয় জানিয়ে বলেন, “তিন থেকে চার দিন পর পর শিম তুলে আমরা বিক্রি করি।”

উপজেলার শৌলডুবী গ্রামের কৃষক শুক্কুর আলী (৫২) বলেন, ইতোমধ্যে তার জমি থেকে উৎপাদিত প্রায় ৪০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেছেন। এ বছর আবহাওয়া ও পোকা মাকড়ের উপদ্রব না থাকায় চাষিরা আনন্দে রয়েছে।

আর আকোটেরচর ইউনিয়নের সোবাহান মুন্সী (৪৬) জানান, ইতিমধ্যে তিনি তার জমিতে উৎপাদিত ২০ হাজার টাকার শিম উৎপাদন করেছেন।

এ উপজেলার বিভিন্ন স্থার ঘুরে দেখা গেছে, শীতের আগাম বার্তায় কুয়াশায় ভেজা ভোরের আলোতে সীম ক্ষেতে কাজ করছেন কৃষক কৃষাণীরা। সদরপুর অঞ্চলের অধিকাংশ কৃষক এবার বেশি করে শিম চাষ করেছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও ঢাকাসহ দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে এ সীম সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে।ফলে শিম চাষিরা বেশ লাভবান হবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ বছর সদরপুর উপজেলার ৩৫০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা হয়েছে; যার মধ্যে ৯০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করা হয়েছে বলে কৃষি কর্মকর্তা বিধান রায় জানান।