এই বিরূপ পরিবেশে প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের ক্লাশ করতে হচ্ছে; এলাকাবাসীকে চলাচল করতে হচ্ছে।
এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের ‘ভেনচুরা লেদার ম্যানুফ্যাকচার বিডি লিমিটেড’ থেকে ওই চামড়ার বর্জ্য ফুলতলা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ফেলা হয়।
জমে থাকা বর্জ্যর তীব্র দুর্গন্ধ স্কুল ও আশপাশের ঘর বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ছে। শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাতায়াত করতে হয় নাক চাপা দিয়ে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম মজিবুল হক বলেন, পরিবেশ দূষণের অভিযোগে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত ১ অক্টোবর ভেনচুরা কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানায়।
“এরপর পর বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে পুরানো বর্জ্য মাটি দিয়ে চাপা দেওয়ার কথা ছিল; কিন্তু বর্জ্য ফেলা বন্ধ হলেও পুরনো বর্জ্য মাটিচাপা দেওয়া হয়নি।”
স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী জেবা আফ্রিয়া বলেন, “ক্লাশে দুর্গন্ধ আসে, আমরা লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে পারছি না। মাঠে খেলাও বন্ধ হয়েছে আমাদের।”
অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আলিফ ইসলাম বলেন, “স্কুলের পাশে আমাদের বাড়ি। স্কুলে গেলেও গন্ধ লাগে আবার বাড়িতেও গন্ধ লাগে। এতে যেমন স্কুলে লেখাপড়ার ব্যাঘাত হচ্ছে, বাড়িতেও লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে পারছি না।”
ফুলতলা এলাকার গৃহিনী ফাহিমা আক্তার বলেন, “বাড়ির কাছে ময়লা ফেলার পর থেকেই দুর্গন্ধে আমাদের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। বৃষ্টি হলে গন্ধ আরও বাড়ে, তখন বাড়িতে টেকা দায়।”
একই এলাকার হামিদুল ইসলাম বলেন, “এলাকাবাসী এবং স্কুলের শিক্ষার্থীদের সমস্যার পাশাপাশি এপথে চলাচলকারী পথচারীরাও সমস্যায় পড়েছে। আমরা দ্রুত এর প্রতিকার চাই।’
ইপিজেড থেকে বিভিন্ন কারখানার বর্জ্য অপসারণে জন্য কোম্পানিগুলো ঠিকাদার নিযুক্ত করে থাকে। ভেনচুরা লেদারের হয়ে কাজ করেন ঠিকাদার কুতব উদ্দিন।
এ বিষয়ে কুতুব উদ্দিন বলেন, “স্কুলের মাঠে বর্জ্য আমি ফেলিনি। আমার লাইসেন্স ভাড়া নিয়ে মাহবুব নামের একজন ঠিকাদার ওই বর্জ্য সেখানে ফেলেছেন।”
ঠিকাদার মাহবুরের কাছে জানতে চাইলে স্থানীয় লেবু মিয়া নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আমি কুতুব উদ্দিনের কাছ থেকে লাইসেন্স ভাড়া নিয়ে ভেনচুরার বর্জ্য অপসারণ করে থাকি; কিন্তু বিদ্যালয়ের খাল ভড়াটের জন্য স্থানীয় লেবু মিয়া আমার কাছ থেকে বর্জ্য নিয়ে সেখানে ফেলেছেন।
“আমি তাকে বর্জ্য ফেলার পর মাটি চাপা দিতে বলেছিলাম। এখন সমস্যা তৈরি হওয়ায় আমি সেখানে মাটি চাপা দেওয়ারও ব্যবস্থা করছি।”
মাহবুবের অভিযোগ অস্বীকার করে লেবু মিয়া বলেন, “কুতুব ও মাহবুবই ইপিজেড থেকে বর্জ্যগুলো এনে ফেলেছেন; এখন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।”
ভেনচুরা লেদারের ব্যবস্থাপক সরোয়ার হোসেন বলেন, “স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে চিঠি পেয়ে বিষয়টি জেনেছি। সেখানে একটি ডোবা বন্ধ করার জন্য আমাদের নিযুক্ত লোকের কাছ থেকে ওই এলাকার লেবু মিয়া বর্জ্য নিয়ে ফেলেছেন।”