মাগুরা হাসপাতালে রোগীর খাবার ‘লুটপাট’

মাগুরা সদর হাসপাতালে রোগীর জন্য বরাদ্দ খাবার আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করেছে।

মাগুরা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2018, 05:29 PM
Updated : 19 June 2018, 05:53 PM

অভিযোগে পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার মাগুরা জেলা প্রশাসনের দুজন ম্যাজিস্ট্রেট সরেজমিন তদন্তে যান। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে রোগী ও ম্যাজিস্ট্রেট জানান।  

জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট কাউছার হাবিব ও ফারুক আহম্মেদ জানান, তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে মঙ্গলবার দুপুরে তারা মাগুরা সদর হাসপাতালে রোগীদের জন্য সরবরা করা খাদ্যের মান এবং খাদ্য তালিকা সরেজমিনে যাচাই করতে যান।

তারা জানান, যাচাইকালে দেখা যায় সরকার নির্ধারিত বরাদ্দ প্রতিটি রোগীর জন্য সকালে ও দুপুরে যে পরিমাণ খাবার সরবরাহ করার কথা সে পরিমাণ  খাবার রোগীরা পাচ্ছেন না।

এ সময় রোগীরা ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে অভিযোগ করেন, তাদের জন্য প্রতিদিন দুধ (ডানো) ও চিনি বরাদ্দ থাকলেও কখনোই তা সরবরাহ করা হয় না। যে মাছ, মাংস দেওয়া হয় তা বরাদ্দের তুলনায় অতি সামান্য।

ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রশাসনে তাদের পরিদর্শন প্রতিবেদন দেবেন বলে জানান।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের বাবুর্চি সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “প্রতিদিন বরাদ্দকৃত চাল থেকে এক কেজি, মাংস থেকে ১০০ গ্রাম এবং সবজি থেকে এক কেজি করে কম সরবরাহ করা হয়।”

কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটরা সরেজমিনে গিয়ে দেখেন, খাসির মাংস দেওয়ার কথা থাকলেও দুপুর দেড়টা পর্যন্ত হাসাপাতালের রান্না ঘরে কোনো মাংসই  আসেনি। মঙ্গলবার ৮৮ জন রোগির জন্য তিন কেজি পেঁপে ও ৫০০ গ্রাম আলু সরবরাহ করা হয়েছে। তালিকায় চাল কুমড়া দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি।

রাজন সরকার, হাছান আলী, নাজমা পারভীনসহ কয়েকজন রোগী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা তিন-চারদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও কোনো খাবার পাননি। হাসপাতালে তিনশ রোগী ভর্তি থাকলেও সেখানে ৫০-৬০ জনকে খাবার দেওয়া হয়। এর মধ্যে যারা যা পান তার মানও ভালো না।

পেয়িং বেডের রোগীদের দুধ ও চিনি দেওয়ার কথা থাকলেও তারা কখনোই তা যান না বলে এই রোগীরা জানান।

সহকারী বার্বুচি রেহেনা বেগম বলেন, “খাসির মাংস সরবারাহ করা কথা থাকলেও ঠিকাদার কখনোই তা দেন না। মাংসর পরিবর্তে ‘পিলাই’, ‘ফ্যাকশা’ ও ‘চামড়া’ সরবরাহ করেন। রুই মাছ দেওয়ার কথা থাকলেও সরবরাহ করা হয় পোনা মাছ। দুধ, চিনি কখনোই দেওয়া হয় না।”  

হাসপাতালে খাদ্য তালিকা অনুযায়ী প্রতিদিন পেইং বেড়ের রেগীদের দুধ, চিনি, কলা, ডিম এবং সাধারণ বেডের রোগীদের পাউরুটি, ডিম, কলা, ভাত, ডাল ও সবজি দেওয়ার কথা। এছাড়া শনি, সোম, বুধবার রোগী প্রতি দুপুরে ও রাতে ১১০ গ্রাম রুই মাছ, বৃহস্পতি, মঙ্গল, রোববার দুপুরে ও রাতে ৫৫ গ্রাম খাসির মাংস এবং শুক্রবার দুই বেলা ১১২ গ্রাম করে মুরগির মাংস বরাদ্দ রয়েছে।

শেখ ইসতিয়াক নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, “খাতা কলমে রোগীদের জন্য সবকিছু বরাদ্দ থাকলেও তার চার ভাগের এক ভাগও সরবরাহ করা হয় না। সবই চুরি হয়ে যায়, দেখার কেউ নাই।”

এ ব্যাপারে হাসপাতালে খাদ্য সরবরাহে নিয়োজিত ঠিকাদার ফারুক আহম্মেদ বলেন, তার লাইসেন্সে কাজ নেওয়া হলেও স্থানীয় প্রভাবশালীরা সাব-ঠিকাদার হিসেবে খাবার সরবরাহ করেন। অনিয়ম হলেও তার কিছু বলার নাই।

হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক ডা. সুশান্ত কুমার বিশ্বাস বলেন, “খাবার নিয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। তবে বিয়ষটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”