মাগুরার ২ শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

মাগুরা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের কাছ থেকে অনৈতিকভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

মাগুরা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2018, 03:35 PM
Updated : 29 May 2018, 03:35 PM

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার মজুমদার ও পরিদর্শক এসএম মাজেদুর রহমান প্রায় প্রতিদিন স্কুল ও মাদ্রাসা পরিদর্শনের নামে হাজার-হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহণ করছেন।

এছাড়া শিক্ষক এমপিওভুক্তি এবং স্কুল-মাদ্রাসার ভবন নির্মার্ণের তদবির করার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ তাদের।

মহম্মদপুর উপজেলার পাল্লা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সৈয়দ শওকত আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ৪-৫ মাস আগে বিদ্যালয় পরিদর্শক মাজেদুর রহমান তাদের স্কুলে আসেন মাদক বিরোধী সমাবেশে।

“সমাবেশ শেষে বিদ্যালয়ের সেমিনার কক্ষে আপ্যায়নকালে সকল শিক্ষকদের মাঝে তিনি নিজেকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পরিচয় দেন। ওই সময় স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদ খালি থাকায় সহকারী শিক্ষক জাকির হোসেনকে তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন। তিনি চলে যাওয়ার সময় জাকির হোসেন মাজেদুর রহমানকে পাঁচ হাজার টাকা উৎকোচ দেন।”

মহম্মদপুরের ধোয়াইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সম্প্রতি রনজিৎ মজুমদার ও মাজেদুর রহমান তার স্কুল পরিদর্শনে আসেন।

“এ সময় স্কুলের পক্ষ থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষক  ওলিয়ার রহমান তাদের আড়াই হাজার টাকা সম্মানী প্রদান করেন।”

সদর উপজেলার দক্ষিণ মির্জাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিকী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জেলা শিক্ষা অফিসার ও স্কুল পরিদর্শক দুইবার তার স্কুল পরিদর্শনে আসেন।

“স্কুলের বিজ্ঞানাগারের যন্ত্রপাতি ও গ্যারেজ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ এনে দেওয়ার নামে দুই বারে তারা পাঁচ হাজার টাকা গ্রহণ করেছেন।”

মহম্মদপুরের ঘোষপুর গ্রামের অভিভাবক আজাদুল ইসলামের অভিযোগ, “ঘোষপুর রিজিয়া রুবিয়া দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি ও ম্যানেজিং কমিটি জাল নিবন্ধন সনদের মাধ্যমে আব্দুল ওহাব মিলন নামে একজনকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ৪র্থ শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। দাখিল মাদ্রায় ৪র্থ শিক্ষক নিয়োগের কোনো সুয়োগ নেই।”

এ অনিয়মের সুযোগে অবৈধ এমপিওভুক্ত ওই শিক্ষকের কাছ থেকে জেলা শিক্ষা অফিসার প্রতিমাসে মাসোহারা নিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ আজাদুলের।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও বিদ্যালয় পরিদর্শকের বিরুদ্ধে এ ধরনের অন্তত ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা করে উৎকোচ নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।  

পরিদর্শক মাজেদুর রহমান সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি জেলা শিক্ষা অফিসারের আজ্ঞাবহ। তিনি যে স্কুল, মাদ্রাসায় সাথে নিয়ে যান সেখানেই যান।

“মূলত টাকা পয়সা শিক্ষা অফিসার তার ড্রাইভারের মাধ্যমে ম্যানেজ করেন। সকল টাকা ড্রাইভার গ্রহণ করেন।”

স্কুল-মাদ্রাসা থেকে নেওয়া কোনো টাকা তিনি নেন না বলে দাবি মাজেদুরের।

জেলা শিক্ষা অফিসারের গাড়ির চালক মো. শাহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শিক্ষা অফিসার রনজিৎ কুমার মজুমদার ও পরিদর্শক এসএম মাজেদুর রহমান স্যার প্রতিমাসে কমপক্ষে ৪০টি স্কুল ও মাদ্রাসা পরিদর্শন করেন।

“সবকিছুই মাজেদ স্যার ম্যানেজ করেন। তিনি স্কুল-মাদ্রাসা পরিদর্শনকালে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বড় স্যারের সম্মান রাখার জন্য টাকা দেওয়ার কথা বলেন।

“তবে এটা সত্য কোনো স্যারই সরাসরি টাকা নেন না। ড্রাইভারের (আমার) হাতে টাকা দিতে বলেন। স্যারের পূর্ব নির্দেশে তিনিই সব টাকা নেন বলে স্বীকার করেন। তবে গাড়িতে উঠেই বড় স্যার তার কাছ থেকে সব টাকা নিয়ে নেন। পরে এ টাকা থেকে মাজেদ স্যারকে ভাগ দেন।”

তাকেও মাঝে মধ্যে দুই-একশ টাকা বকশিস দেন বলে জানান চালক শহিদদুল।

তিনি আরও বলেন, “মাসে স্কুল পরিদর্শন থেকে দুই স্যার গড়ে ৫০ হাজার টাকা আদায় করেন। এছাড়া স্কুলের বিল্ডিং এনে দেওয়া ও শিক্ষক এমপিওভুক্তির জন্য বড় স্যার মোটা অংকের ঘুষ গ্রহণ করেন। তবে তার সব অনৈতিক কাজের সঙ্গী স্কুল পরিদর্শক মাজেদ স্যার।”

তবে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার মজুমদার দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক অতিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জেলা শিক্ষা কমকর্তা ও স্কুল-মাদ্রাসা পরিদর্শক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অর্থ নিচ্ছেন বলে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে; যা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিষয়টি তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।