শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভুলতায় ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, “কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে এদেশের রাজনৈতিক একটি মহলের ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় বিএনপি এখন নিদারুণভাবে হতাশ।
“এ আন্দোলনকে রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ দিয়ে, বিএনপির এতদিনের ব্যর্থতার পর ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের যে অপচেষ্টা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সময়োচিত ঘোষণায় সেটা ব্যর্থ হয়েছে।”
তিনি বলেন, কোটার বিষয়ে নতুন কিছু করতে হলে বিদ্যমান যে ব্যবস্থা তা বাতিল করাই ছিল সময়োপযোগী পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করেছেন।
“নতুন করে এই ব্যবস্থার বিকাশ করতে হলে এটাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে কেবিনেট সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে ন্যায়ভিত্তিক, যুক্তিভিত্তিক একটি সমাধান আসবে।”
সরকারি চাকরিতে নিয়োগে মোট ৫৬ শতাংশ বিভিন্ন কোটায় সংরক্ষণের যে নিয়ম রয়েছে তা কমানোর দাবিতে গত রোববার থেকে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে আসছিল শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।
তাদের ওই আন্দোলনের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সরকারি চাকরিতে নিয়োগের কোটা পদ্ধতি একেবারেই তুলে দেওয়ার কথা বলেন।
জাতীয় সংসদে তিনি বলেছিলেন, “বারবার এই আন্দোলন ঝামেলা মেটাবার জন্য কোটা পদ্ধতি বাতিল; পরিষ্কার কথা; আমি এটাই মনে করি, সেটা হল বাতিল।”
প্রধানমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পর মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবিতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা।
এই প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার কীভাবে হবে সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকার কথা জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান বৃহস্পতিবার বলেন, “প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন সেগুলো শুনেছি। তিনি কোটা পদ্ধতি বাতিল ঘোষণা করেছেন, আবার তিনি প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর যাতে স্বার্থ সংরক্ষিত হয় সে বিষয়ে পৃথক ব্যবস্থা নেবেন সে আশ্বাসও দিয়েছেন।
“আমি এখন অপেক্ষায় আছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে যেভাবে অগ্রসর হতে বলবেন আমি সেভাবে বাকি কাজ করব।”
ভুলতায় ফ্লাইওভারের কাজ পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম বাইপাস সড়কে রূপগঞ্জের ভুলতা বাণিজ্যিক এলাকায় ২৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি ফ্লাইওভারের কাজ চলছে। এ ফ্লাইওভার দুটির দৈর্ঘ্য দুই দশমিক ১৩ কিলোমিটার এবং এক দশমিক ০৮৪ কিলোমিটার। চলতি বছরের শেষে কাজ সম্পন্ন হলে আর যানজট থাকবে না।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুর কাজ হচ্ছে। সে কারণে যানজট হচ্ছে; আগামী ৩/৪ মাস পর যানজট সহনীয় মাত্রায় চলে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, “সারা দেশে সেতুতে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। রাস্তা প্রশস্ত হচ্ছে, সেতু হচ্ছে, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল ও পদ্মা সেতু হচ্ছে। কাজ তো চলছে। কাজগুলো সমাপ্ত হলে যানজট অনেকটা নিরসন হবে; তবে কিছুই হবে না, যদি আমাদের মনমানসিকতার পরিবর্তন না হয়।
“এখানে চালকেরা এত বেপরোয়া, পথচারীরা আইন মানে না; আজকে দুর্ঘটনায় কলেজ ছাত্র রাজীব মৃত্যুর প্রহর গুণছে। একটি ইউনিভার্সিটির ছাত্রীর জীবন বিপন্ন। চালকেরা অতিরিক্ত ট্রিপের আশায় অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে।”
কেউ নিয়ম মানে না মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আমরা ৩৭টি ফুটওভার ব্রিজ করেছি। এই ফুটওভার ব্রিজ কেউ ব্যবহার করতে চায় না। বেশিরভাগ ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহৃত হচ্ছে না।”
এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবু, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছাড়াও ভুলতা ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।