আট বছর আগে নির্মিত এ পার্কের সৌন্দর্য এক সময় ভ্রমণ পিপাসুদের ব্যাপকভাবে আকর্ষণ করত। অযত্ন-অবহেলা ও পরিচর্যার অভাবে এখন আকর্ষণহীন হয়ে পড়েছে।
প্রতিবছর এখান থেকে বহু আয় হলেও এ পার্কে উন্নয়নে তার সামান্যও ব্যয় করা হয় না।
সরকারি অর্থায়ন পেলে পার্কের আগের অবস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করে জেলা প্রশাসন।
বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ১৯৯৯ সালে ময়মনসিংহ বন বিভাগের ব্যবস্থাপনায় নালিতাবাড়ীর পোড়াগাঁও ইউনিয়নের মধুটিলা রেঞ্জের সমেশ্চূড়া বিটের আওতায় ৩৮০ একর জমির ওপর মধুটিলা ইকোপার্ক তৈরি করা হয়।
একই সঙ্গে দুই পর্যায়ে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রাথমিক অবকাঠামো ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ শেষে ২০০৬-২০০৭ অর্থবছর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পার্কের যাত্রা শুরু হয় বলে জানান তিনি।
গারো পাহাড় সংলগ্ন এলাকায় নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক পরিবেশে পিকনিক স্পটটি শুরু থেকেই ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। প্রতিবছর শীতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ শিক্ষা সফর, বনভোজনসহ নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করে আসছে এখানে।
পার্কে বেড়াতে আসা গাজীপুরের রেদোয়ান ইসলাম ও মোখলেছুর রহমান, বগুড়ার জাফর আহমেদ, সিরাজুল ইসলাম, শেরপুরের স্মৃতি খাতুন বলেন, পার্কের চারপাশের নোংরা পরিবেশ দেখে তারা হতাশ। এখানে এসে তারা প্রাণ খুলে আনন্দ করতে পারেননি।
পার্কের ঘোড়াওয়ালা মনি মিয়া, চটপটি বিক্রেতা তুফান মিয়া ও পণ্য সামগ্রী বিক্রেতা নাজমুল ইসলাম রাজু বলেন, পর্কেন লোকজন আসা কমে যাওয়ায় তাদের আয়ও অনেক কমে গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পার্কের সুদৃশ্য প্রধান ফটক, ডিসপ্লে মডেল, তথ্য কেন্দ্র, গাড়ি পার্কিং জোন, ক্যান্টিন, ওয়াচ টাওয়ার, মিনি চিড়িয়াখানা, মনোরম লেক ও বোট, স্টার ব্রিজ, সুউচ্চ পাহাড়ে ওঠার জন্য সিঁড়ি, মিনি শিশু পার্ক, রেস্ট হাউজ, পাবলিক টয়লেট রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হওয়ার পথে।
লেকের বোটগুলো ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এছাড়া বিরল প্রজাতির পশু-পাখি, ঔষধি ও সৌন্দর্যবর্ধক প্রজাতির গাছের বাগান, মৌসুমী ফুলের বাগান এবং সাত রঙের গোলাপ বাগানও পরিচর্যাবিহীন।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বন কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন, “ইকোপার্কে সরকারিভাবে কোনো উন্নয়নমূলক কাজ নাই। স্টার ব্রিজ, ওয়াচ টাওয়ার ও বাংলোর সামান্য কিছু সংস্কার চলছে। উন্নয়ন বাড়লে দর্শনার্থীও বাড়বে।”
শেরপুরেরর জেলা প্রশাসক মল্লিক আনোয়ার হোসেন বলেন, মধুটিলা ইকোপার্ক বেশ কয়েক বছর আগে সরকারি অর্থায়নে বেশ কিছু উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছিল। বিগত কয়েক বছরে কোনো আর্থিক অনুদান না পাওয়ায় এই স্থাপনাটি আস্তে আস্তে জরাজীর্ণ হয়ে যাচ্ছে।
বিশেষ করে এখানে ইকো টুরিজমের সম্ভাবনা বেশি। শাল বৃক্ষসহ পাহাড়, ঝর্ণা সব মিলিয়ে এখানে মানুষ এসে আনন্দ অনুভব করবে।
মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এখান থেকে আয় হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা। কিন্তু এ পার্কের উন্নয়নে বনবিভাগ থেকে পাওয়া গেছে মাত্র এক লাখ ৪১ হাজার টাকা।