স্কুলের লিফলেটে মোনায়েম খান ‘শহীদ’

বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর আব্দুল মোনায়েম খানকে ‘শহীদ’ আখ্যায়িত করে একটি বিদ্যালয়ের লিফলেট নিয়ে ময়মনসিংহে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে।

ইলিয়াস আহমেদ ময়মনসিংহ থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2017, 02:26 PM
Updated : 13 Jan 2017, 07:43 PM

‘অন্বেষা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ’ নামের ইংরেজি মাধ্যমের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৬ সালে ময়মনসিংহ শহরের নতুন বাজার সাহেব আলী রোডে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন মোনায়েম খানের ছোট মেয়ে নাসরিন মোনায়েম খান। নাসরিন এই স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্কুলের সাইন বোর্ডে চাঁদ-তারার মনোগ্রাম আাঁকা হয়। ভর্তি পরীক্ষার লিফলেটেও চাঁদ-তারা মনোগ্রাম আছে। এতে আরও লেখা হয়েছে- শহীদ গভর্নর আব্দুল মোনায়েম খানের স্মৃতির উদ্দেশে নিবেদিত।  

এছাড়া স্কুলের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রসহ বিভিন্ন দাপ্তরিক কাগজপত্রেও মোনায়েম খানকে শহীদ আখ্যায়িত করা হয়েছে। এখানে কখনও স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ কোনো দিবসই পালন করা হয় না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

স্কুলের শিক্ষার্থীদের ভুল ইতিহাস শিক্ষা দেওয়ার কারণে মুক্তিযোদ্ধাসহ স্বাধীনতার পক্ষের লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

মোনায়েম খান ছিলেন পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করা মোনায়েম খান ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর ঢাকার বনানীর নিজ বাড়িতে মুক্তিবাহিনীর গুলিতে আহত হন। এরপর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

এ প্রতিষ্ঠানের চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে মোনায়েম খান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বলে, “মোনায়েম খানকে ডাকাতরা হত্যা করেছে, তাই সে শহীদ। কোনো মানুষ যদি কারও হাতে মারা যায় তাহলে তাকে শহীদ বলতে হয় বলে শিক্ষকরা বলেছেন।”

সাবেক ছাত্রনেতা ও ময়মনসিংহ জেলা জনউদ্যোগের আহবায়ক নজরুল ইসলাম চুন্ন বলেন, অন্বেষা স্কুল এন্ড কলেজে কখনোই স্বাধীনতা, বিজয় দিবসসহ কোনো দিবসই পালন করা হয় না। কর্তৃপক্ষ মোনায়েম খানকে শহীদ আখ্যায়িত করে শিক্ষার্থীদেরও ভুল ইতিহাস শিক্ষা দিচ্ছে।

তাই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গত বছরের ২৭ নভেম্বর তারা জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেন বলে জানান চুন্নু।

ময়মনসিংহ মহানগর মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের সদস্য সচিব সেলিম সরকার বলেন, “মোনায়েম খানকে শহীদ আখ্যায়িত করা ন্যক্কারজনক ঘটনা। মোনায়েম খান শহীদ হলে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা তো রাজাকার হয়ে যাব।”

দ্রুত প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ না হলে আন্দোলন করে সেটি বন্ধ করা হবে বলে হুঁশিয়ার করেন সেলিম।

প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল নাসরিন মোনায়েম খান ঢাকায় থাকেন। মাঝেমধ্যে আসেন। তার মোবাইলে ফোন করে পাওয়া যায়নি।

প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বে থাকা এডমিন অফিসার তৌফিকুর রহমান বলেন, “কী লিখতে হবে সেটি তো ইতিহাসে নাই। মোনায়েম খান স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছেন এমনটি কোথাও লেখা নাই।”

ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মো. খলিলুর রহমান বলেন, তদন্তে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পাওয়া গেলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।