যশোরের মিরাজ হত্যা মামলায় ৫ জনের ফাঁসির রায়

যশোরের ঝিকরগাছার স্কুলছাত্র রিয়াজুল ইসলাম মিরাজ হত্যা মামলায় পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড ও চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2016, 11:13 AM
Updated : 13 March 2016, 01:48 PM

যাবজ্জীবন দণ্ডিতদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছর করে সশ্রম কারাভোগ করতে হবে।

রোববার খুলনার বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম এ রব হাওলাদার তিন বছর আগের এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার লাউজানী গ্রামের আব্দুল হকের ছেলে জাহিদ হাসান মিলন (৩৩), ইউসুফ ড্রাইভারের ছেলে মহসিন রেজা শাহীন (৩০), গোলাম হোসেনের ছেলে মামুন চৌধুরী মুকুল (৩৪), আব্দুল খালেকের ছেলে রুবেল (৩০) ও শুকুর আলীর ছেলে সোহাগ (৩১)।

এদের মধ্যে মহসিন রেজা শাহীন ও মামুন চৌধুরী মুকুল পলাতক রয়েছেন। অন্য তিনজন রায় ঘোষণার সময় কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।

যাবজ্জীবন দণ্ডিতরা হলেন, যশোর শহরের কোতোয়ালি থানা এলাকার ইকবাল হোসেন (৩৩), তার শাশুড়ি ঝিকরগাছা উপজেলার নারাঙ্গালী গ্রামের রাশিদা বেগম জানকী (৪৩), শ্বশুর হযরত আলী (৪৮) ও লাউজানী গ্রামের নুরুল হকের ছেলে আবুল কাশেম ওরফে কাশু (৩১)।

এদের মধ্যে আবুল কাশেম ও হযরত আলী পলাতক রয়েছেন। অন্য দুইজন রায় ঘোষণার সময় কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।

দণ্ডিতদের নামের পাশে বর্তমান বয়স উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া মামলার আরও তিন আসামি মতিউর রহমান, আরিফুল ইসলাম ও কামাল ঘটনার সময় কিশোর ছিলেন বলে তাদের বিচার যশোরের কিশোর আদালতে চলছে। ঘটনার সময় এদের বয়স ছিল যথাক্রমে ১৬ বছর, ১৬ বছর ও ১৮ বছর।

এ আদালতের পিপি শেখ মো. এনামুল হক জানান, ঝিকরগাছা উপজেলার লাউজানী গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে রিয়াজুল ইসলাম মিরাজ (১৩) উপজেলার বিএম হাই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত।

২০১৩ সালের ২০ নভেম্বর আসামিরা তাকে অপহরণ করে এবং দুদিন পর তার বাবার কাছে ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। পরে মুক্তিপণের অংক ৩ লাখে নামিয়ে আনা হয় এবং সে অনুযায়ী ২২নভেম্বর মিরাজের বাবা মিজানুর রহমান দুই দফায় ৮ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে আসামিদের দেন।

এরপর অপহরণকারীরা বাকি টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে এবং ২৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় যশোর সদরের নারাঙ্গালী এলাকার খালপাড়ে মিরাজের সাইকেল ও পাশের ঝোঁপের মধ্যে তার ক্ষতবিক্ষত লাশ পায় পুলিশ। মিরাজকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তার হাতের বিভিন্ন স্থানে এবং জিহ্বা কেটে ফেলে অপহরণকারীরা।

প্রথমে আসামি জাহিদ হাসান মিলনকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে গ্রেপ্তার করা হয় মতিউর রহমানকে।

মতিউর রহমানের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।  

ওই ঘটনায় মিরাজের বাবা ঝিকরগাছা থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

তদন্ত শেষে গোয়েন্দা পুলিশের এসআই খবির হোসেন ২০১৪ সালের ৩১ মে ১২ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। পরে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য মামলাটি পাঠানো হয় বিভাগীয় দ্রুত বিচার আদালতে।

খুলনার বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর ৯ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার শুরু হয়

এ মামলায় ৪১ জনের মধ্যে ২৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে আদালত।

মিরাজের বাবা মো. মিজানুর রহমান ছেলের হত্যার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ফাঁসির আসামিদের দণ্ড দ্রুত কার্যকর করতে হবে।

তিনি ও তার পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন প্রশাসনের কাছে।